প্রতিনিধি, নীলফামারী: বসতবাড়ি ও স্থাপনা বাড়লেও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়েনি নীলফামারীর ছয় উপজেলার আটটি ফায়ার স্টেশনের কর্মীদের। ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বিপাকে পড়েন ফায়ার ফাইটাররা। এ অবস্থায় আগুন নেভানো ও উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের।
সূত্র জানায়, আগের চেয়ে প্রচুর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি দক্ষ জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম। জেলায় আটটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় একটি, ডোমার উপজেলায় একটি, ডিমলায় একটি, জলঢাকায় একটি, কিশোরগঞ্জে একটি, সৈয়দপুরে একটি, উত্তরা ইপিজেডে একটি ও চিলাহাটিতে একটি। তবে সদর ‘এ’ শ্রেণি, সৈয়দপুর ফায়ার স্টেশনটি ‘এ’ ও উত্তরা ইপিজেড ‘এ’ শ্রেণি। বাকি পাঁচটি বিভিন্ন ক্যাডাগরির।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, সদরে ৩৯ ও সৈয়দপুর ৩৯ জন করে ও উত্তরা ইপিজেডে ৩২ (প্রথম শ্রেণি), ডোমারে ২৪, চিলাহাটি ২৪, ডিমলা ১০, কিশোরগঞ্জ ১৪ জন, জলঢাকায় ১৪ ও নীলফামারী উপসহকারী পরিচালকের কার্যালয়ে ৫ জন রয়েছে। এনিয়ে মোট ২০১ জন ফায়ার ফাইটার রয়েছে।
বাকি পাঁচটি হলো ডোমার ও চিলাহাটি ‘বি’, ডিমলা ‘সি’, কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকা ‘সি’ ক্যাটাগরির। এছাড়া জলঢাকা, সৈয়দপুর ও নীলফামারী সদরে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও বাকি পাঁচটিতে অ্যাম্বুলেন্স নেই। আগুনে দগ্ধ ফায়ার ম্যান ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালে নিতে বিপাকে পড়তে হয়।
জেলার আটটি ফায়ার স্টেশনে বিভিন্ন পদে ২০১ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন ১৭৮ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোতে জনবল থাকার কথা ২৭ জন, কিন্ত এর বিপরীতে ফায়ার ম্যান রয়েছে ১৪ জন ও ডিমলায় (তৃতীয় শ্রেণি) ১৬ জনের স্থানে ১০ জন।
উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর খড়িবাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী আব্দুল মোতালেব জানান, চলতি মাসের প্রথমের দিকে একসঙ্গে তিনটি বাড়িতে আগুন লাগে। কিন্ত জনবল সংকট ও ভেতরে গাড়ি ঢুকতে না পারায় বাড়ি তিনটি পুড়ে ছাই হয়। দ্রুত ডিমলায় জনবল নিয়োগের দাবি জানাই।
ডিমলা ফায়ার স্টেশনের টিম লিডার মোজাম্মেল হক জানান, ‘আগের চেয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেক বেড়েছে। তবে উপজেলাগুলোতে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়েনি। আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজে ব্যবহƒত আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। জনবল যা আছে, তা পর্যাপ্ত নয়। বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হয়। অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডিমলা ফায়ার স্টেশনে পানিবাহী গাড়ি, ভেহিক্যাল গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স দরকার। দীর্ঘদিনেও তা ব্যবস্থা করা হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘এ’ শ্রণির তিনটি উপজেলা বাদে বাকি পাঁচ উপজেলার বেহাল দশা। নেই জাম্বু কুশন, ড্রাইভিং অ্যাপারেটাস, এয়ার কম্প্রেসার মেশিন, ভেহিক্যাল গাড়ি, পোর্টেবল পাম্প, বিদ্রিং অ্যাপারেটাস ও স্মোক ইজেক্টরসহ এসবের কিছুই নেই। এজন্য বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় হিমশিম খেতে হয়। ‘এ’ শ্রেণির স্টেশনগুলোয় যেসব যন্ত্রপাতি আছে তাতে তিন-চারতলা বাড়িতে আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে।’
জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘পৌর শহরে কিছু কিছু মহল্লায় আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। গ্রামের সড়কগুলো প্রশস্ত না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানো যায় না। তিনি বলেন, ‘এখানে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সদর উপজেলা। আমাদের যে গাড়িটি আছে, এটা পৌর এলাকার মধ্যে চলাচলের উপযোগী। আমাদের যেসব স্টেশন ‘সি’ শ্রেণিতে রয়েছে সেগুলোকে ‘বি’ ও যেগুলো ‘বি’ শ্রেণিতে আছে সেগুলোকে ‘এ’ শ্রেণিতে আনা প্রয়োজন।’