নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ও বিনা খরচে বই ছাপিয়ে আনাসহ আটটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৭৪ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
সামসুল আরেফিন বলেন, আজকে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৯তম ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কমিটির অনুমোদনের জন্য (টেবিলে ১টি উপস্থাপনসহ) চারটি ও ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।
ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিনটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুটি, বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয়-কমিটির অনুমোদিত আটটি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ২২৬ টাকা।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সামসুল আরেফিন বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে সপ্তম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, সভায় ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের পাঁচটি লটে বিনা খরচে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পাঁচটি লটে ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৯৫ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করবে প্রেস লাইন লিমিটেড (২টি লট), লেটার এন কালার (২টি লট) ও সিডান প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন (১টি লট)।
সভায় কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য তিনটি লটে ২০ লাখ নভেল কভিড আরটি-কিউপিসিআর ডায়াগনস্টিক কিট (ভিটিএমও সোয়াবসহ) কেনার জন্য উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে তিনটি লটে ২৭টি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ১০টি দরপত্র কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিন্ম দরদাতা প্রতিষ্ঠান লট-১ এর জন্য স্টেরলিং মাল্টি টেকনোলজি লিমিটেড, লট-২ এর জন্য ওএমসি (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং লট-৩ এর জন্য জি.এস বায়োটেকের কাছ থেকে ১১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকায় ২০ লাখ টাকায় কিট কেনার প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-০৬-এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি কমিটি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৪৭ কোটি ৯৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দুটি বোলার্ড পুল টাগবোট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিন্ম দরদাতা প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড বোলার্ড পুল টাগবোট দুটি সরবরাহ করবে।
তিনি বলেন, ‘অ্যাস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএসএস)’ প্রকল্পের অতিরিক্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি কমিটি।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এবং বর্ধিত মেয়াদের জন্য ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পাঁচ বছর বাড়ানোর জন্য এনভিভিএন ত্রিপুরার সঙ্গে ট্যারিফ প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৭.১৩৮৫২ টাকা হিসেবে চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাঁচ বছরে প্রায় চার হাজার ১৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে হবে।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনাঘাট, জামালদিতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পে গ্যাস ব্যবহার করা হলে ২২ বছর মেয়াদে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ট্যারিফ দুই দশমিক ৯৪৩৭ টাকা হিসেবে মোট ৩৭ হাজার ৪৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা অথবা আরএলএনজি ব্যবহার করা হলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা পাঁচ দশমিক ৪৩৭৭ টাকা হিসেবে মোট ৬৯ হাজার ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কনসোর্টিয়াম ইডরা পাওয়ার হোল্ডিং এসডিএন, মালয়েশিয়া ও উইনিএভিশন পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশ।