নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের নদ-নদীর বেহাল দশার পেছনে ৬৩ হাজার ২১৯ জন দখলদারকে চিহ্নিত করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এসব দখলদাররা দেশের নদীগুলোর মৃতপ্রায় অবস্থার জন্য দায়ী। এদের মধ্যে দেশব্যাপী ২৯ শতাংশ দখলদারকে উচ্ছেদ করেছে নদী রক্ষায় গঠিত জাতীয় কমিশন।
গতকাল নদী রক্ষা কমিশনের কার্যালয়ে ‘২০১৯ সালের বার্ষিক (জানুয়ারি-ডিসেম্বর)’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৫৭ হাজার ৩৯০টি অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয় এবং এর মধ্যে ১৮ হাজার ৫৭৯টি অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। যার শতকরা হার ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। রিপোর্টে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৭ হাজার দখলদার দেখানো হলেও অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে আরও ৬ হাজার দখলদার চিহ্নিত করা হয়।
দখল ও উচ্ছেদের হারে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ঢাকা বিভাগ। দেশের বৃহত্তম এ বিভাগে সর্বমোট ৮ হাজার ৮৯০টি দখলের বিপরীতে ৭ হাজার ৩৮৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়; যা শতকরা ৮৩ দশমিক ০৯ শতাংশ।
খুলনা বিভাগে ১২ হাজার সাতটি দখলদার চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৮ হাজার ৬০৯টি স্থাপনা; যা শতকরা হিসাবে ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ দুই বিভাগের তুলনায় অন্য বিভাগে উচ্ছেদের হার খুবই কম।
চট্টগ্রামে দখলের বিপরীতে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, সিলেটে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও বরিশাল বিভাগে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে দখলের বিপরীতে উচ্ছেদের হার যথাক্রমে ৩৫ দশমিক ৩৩ ও ৩৭ দশমিক ০৭ শতাংশ।
গেল বছর নদী রক্ষা কমিশনের উচ্ছেদ অভিযানের অন্যতম রাজধানীর মিরপুরের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য আসলামুল হকের প্রতিষ্ঠান আরিশা ইকোনমিক জোন এবং মাইশা পাওয়ার প্লান্ট উচ্ছেদ। এছাড়া উচ্ছেদ ও নদীর সীমানা পিলার স্থাপনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। পাশাপাশি ঢাকার চারপাশে মোট ৭৭টি খাল-বিল দখলদারির শিকার হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানে জরিমানা করা হলেও তা যথেষ্ট নয় এবং বড় বড় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না বলে জানান কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাধা নিষেধ আসে। বৃহত্তর স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় আপস করতে হয়। যার কারণে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন এম এ মান্নান।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।