শেয়ার বিজ ডেস্ক : সাহিত্যে এ বছর নোবেল পেয়েছেন হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, আকর্ষণীয় ও দূরদর্শী রচনার জন্য তাকে এ বছর সাহিত্যে নোবেল দেয়া হয়েছে। তার লেখনী বৈশ্বিক ভয়াবহতার মধ্যে শিল্পের শক্তিকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এ পুরস্কার ঘোষণা করে দ্য সুইডিশ একাডেমি। নোবেল কমিটি বলেছে, লাসলো ক্রাসনাহোরকাই মধ্য ইউরোপীয় সাহিত্যের একজন মহাকাব্যিক লেখক। তার সাহিত্যকর্ম বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক কাফকা থেকে শুরু করে থমাস বার্নহার্ডের মতো লেখকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
এই লেখকের সাম্প্রতিকতম বই হেরস্ট ০৭৭৬৯ (২০২১ সালে প্রকাশিত, ইংরেজি অনুবাদ ২০২৪)-এর সম্পর্কে নোবেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি জার্মান সমাজের অস্থিরতাকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। এতে জার্মানির একটি ছোট্ট শহরে সামাজিক অস্থিরতা, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের কারণে বিপর্যস্ত জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এটি তুলে ধরেছে সহিংসতা ও সৌন্দর্যের অসম্ভব মিলনের গল্প।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে জš§গ্রহণ করেন হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের শহর জিউলায়। তার প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো এর পটভূমিও ছিল একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। যেখানকার দরিদ্র বাসিন্দাদের জীবনকে চিত্রিত করা হয়েছে। প্রকাশের পর এটি হাঙ্গেরির সাহিত্য অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলে। পরে বইটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একই নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন হাঙ্গেরিয়ান পরিচালক বেলো ট্যার। সাদাকালো এই সিনেমাটির ব্যাপ্তি প্রায় ৭ ঘণ্টা। লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের ব্রেকথ্রু উপন্যাস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এই বইটি।
তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য মেলানকোলি অব রেজিসট্যান্স (১৯৮৯ সালে প্রকাশিত, ইংরেজি অনুবাদ ১৯৯৮) পড়ে আমেরিকান সমালোচক সুসান সোনট্যাগ তাকে বলেছিলেন সমসাময়িক সাহিত্যের ‘অ্যাপোক্যালিপসের মাস্টার’।
দ্য মেলানকোলি অব রেজিসট্যান্স-এ ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্নের চিত্র আঁকা হয়েছে। পাহাড়ে অবস্থিত একটি ছোট শহর কার্পাথিয়ানে প্রবেশ করে একটি প্রেতাত্মাসদৃশ সার্কাসদল, যার মূল আকর্ষণ একটি বিশাল তিমির মৃতদেহ। এই উদ্ভট এবং আশঙ্কাজনক ঘটনা শহরের ভেতর নানারকম ধ্বংসাত্মক শক্তিকে উসকে দেয়। সহিংসতা, অরাজকতা এবং সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা শহরটিকে নিয়ে যায় স্বৈরাচারী অভ্যুত্থানের দ্বারপ্রান্তে। লেখক চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে নৃশংস দ্বন্দ্ব, যা থেকে কেউই মুক্ত নয়।
তৃতীয় উপন্যাসে এসে লেখক বেছে নেন হাঙ্গেরির সীমানার বাইরের প্রেক্ষাপট। ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯ সালে প্রকাশিত, ইংরেজি অনুবাদ ২০০৬) নামের উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন সাধারণ আর্কাইভ কর্মচারী। যিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্তে নিউইয়র্কে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এই উপন্যাসের ধারাবাহিকতায় জš§ নিয়েছে লেখকের উপন্যাস ‘ব্যারন ভেঙ্কহেইম’স হোমকামিং’ (২০১৬ সালে প্রকাশিত, ইংরেজি অনুবাদ ২০১৯)। উপন্যাসটির চরিত্রটি তার মাতৃভূমিতে (হাঙ্গেরি) ফিরছে। জুয়ার আসক্তিতে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এক জমিদার বহু বছর আর্জেন্টিনায় কাটিয়ে হাঙ্গেরিতে ফিরে আসছে শৈশবের প্রেমকে খুঁজতে। তবে তার সফরসঙ্গী ‘দান্তে’ একটি ছলনাময় চরিত্র। দান্তে তাকে বিপথে নিয়ে যায়।
এ লেখকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ২০০৩ সালের উপন্যাস ‘এ মাউন্টেন টু দ্য নর্থ, এ লেক টু দ্য সাউথ, পাথস টু দ্য ওয়েস্ট, এ রিভার টু দা ইস্ট’। উপন্যাসটি জাপানের কিয়োটোর একটি রহস্যময় কাহিনিকে বর্ণনা করেছে। উপন্যাসটি কাব্যিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। এই উপন্যাসটির ওপর ভিত্তি করে তিনি তার বিশাল সাহিত্য সংকলন ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ লেখেন। এতে রয়েছে ১৭টি গল্প, যা এক বিশেষ বিন্যাসে সাজানো হয়েছে। গল্পগুলোতে এমন এক জগতের সৌন্দর্য ও শিল্পের স্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যে জগৎ দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং এটির সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায় না। বইটির গল্পের সূচনা হয় কামো নদীর ধারে অপেক্ষারত একটি সাদা বকের মনোমুগ্ধকর চিত্র দিয়ে।
বইটির মূল থিমটি জাপানের একটি পৌরাণিক কাহিনি থেকে এসেছে। যেখানে সেইবো নামের এক দেবী এমন এক বাগান পাহারা দেন যেখানে প্রতি তিন হাজার বছর পর অমরত্বের ফল ধরে। গল্পগুলো শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়া নিয়ে অনুসন্ধান চালায়, যেখানে দেখানো হয় যে শিল্পের সৃষ্টি হয় দীর্ঘ প্রস্তুতি ও নিপুণ দক্ষতার মাধ্যমে। আবার কখনও কখনও অপ্রত্যাশিত ঘটনাও এই সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।
১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১৭ বার সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়েছে। আর সব মিলিয়ে ১২১ সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যার মধ্যে ১৮ জন হলেন নারী। এছাড়া চারবার যৌথভাবে একাধিক ব্যক্তিকে সাহিত্যে নোবেল দেয়া হয়েছে। গত বছর সাহিত্যে নোবেল পান দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং।
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post