শেয়ায় বিজ ডেস্ক: মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি। মালয়েশিয়া সরকারের মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএমটুএইচ) কর্মসূচির আওতায় ওই বাংলাদেশিরা সেদেশে সেকেন্ড হোম গড়ার অনুমতি পেয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের খবরে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, কুয়ালালামপুরে এমএমটুএইচ জাতীয় কর্মশালায় দেশটির পর্যটন ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী নাজরি আজিজ নিজেদের মাটিতে বিদেশিদের বসবাসের এ সুবিধার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানান, এ কর্মসূচি চালুর পর থেকে ভালো সাড়া পড়েছে। এ পর্যন্ত ১২৬টি দেশের ৩৩ হাজার ৩০০ মানুষ এ সুবিধা পেয়েছেন।
মন্ত্রী নাজরি বলেন, সেকেন্ড হোম কর্মসূচির আওতায় অংশ নেওয়া মানুষ স্থাবর সুবিধা ও রাজস্ব হিসেবে মোট এক হাজার ২৮০ কোটি মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ করেছেন। এমএমটুএইচ কর্মসূচির সুবিধা নিতে ৩১ হাজার ৭২৩টি আবেদনের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। দেশটিতে পাড়ি জমাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক চীনা নাগরিক আবেদন করেছিলেন বলেও জানান তিনি।
এখন পর্যন্ত চীনের সর্বোচ্চ সাত হাজার ৯৭৬, জাপানের চার হাজার ১২৭, বাংলাদেশের তিন হাজার ৩৯৯, যুক্তরাজ্যের দুই হাজার ৩৬১, ইরানের এক হাজার ৩৬১, সিঙ্গাপুরের এক হাজার ২৫৮, তাইওয়ানের এক হাজার ১৭৫, কোরিয়ার এক হাজার ১৭৪, পাকিস্তানের ৯৫৮, ভারতের ৮৬১ ও অন্যান্য দেশের সাত হাজার ১০৬ নাগরিককে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, মালয়েশিয়ায় এখন সবচেয়ে আলোচিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম অন্যতম। এর আওতায় দেশটির সরকার বিদেশিদের দিচ্ছে সেখানে বসবাস ও ব্যবসা করার অবারিত সুযোগ। ১০ বছরের মাল্টিপল ভিসাসহ অবাধ যাতায়াত, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ব্যবসা, ফ্ল্যাট বা প্লটে বিনিয়োগের নানা আকর্ষণে প্রকল্পটি চালু করা হয় ২০০২ সালে। সেকেন্ড হোমের বৈশিষ্ট্য হলো, অর্থের বিনিময়ে মেয়াদি-নাগরিকত্ব গ্রহণ। এ প্রকল্পের আওতায় সুযোগ গ্রহীতাদের ১০ বছর পর্যন্ত দেশটিতে অবস্থানের অনুমতি (মাল্টিপল ভিসা) দেয় মালয়েশীয় সরকার। প্রকল্পের শর্ত মেনে চলার ওপর ভিত্তি করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়।
মালয়েশিয়া দ্বারা স্বীকৃত সব দেশের নাগরিকের জন্য এ সুযোগ রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত, মালয়েশিয়ায় শিক্ষার জন্য যাওয়াদের অভিভাবক, মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করতে আগ্রহী ও বিদেশি দম্পতি চাইলেই ‘মেয়াদি-নাগরিকত্ব’ গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীরা তাদের স্বামী/স্ত্রী ও অবিবাহিত সন্তান (২১ বছরের নিচে) নিয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে পাসপোর্টে দেওয়া হবে মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম সিলমোহর। মেয়াদি-নাগরিকত্ব গ্রহণকারী প্রত্যেকই শুল্কমুক্ত সম্পদ কিনতে পারবেন। আয় করলে শুল্ক দিতে হবে না। উত্তরাধিকার কর দিতে হবে না। মালয়েশিয়া থেকে শুল্কমুক্ত একটি গাড়ি কিনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে নিজের দেশ থেকে কেউ একটি গাড়ি নিয়ে গেলে তার জন্য কোনো ধরনের শুল্ক দিতে হবে না। একজন বিদেশি গৃহপরিচারিকার জন্য আবেদন করতে পারবেন। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি বয়স্করা পার্ট-টাইম কাজ করতে পারবেন।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ, ভেজালমুক্ত পরিবেশের কারণে মালয়েশিয়াকে সেকেন্ড হোম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। তবে এমএমটুএইচ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মুদ্রা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যা দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে রয়েছে।