নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কোন্নয়নে জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য বণ্টন, শান্তিপূর্ণ সীমান্ত, ট্রানজিটের বিষয়ে দুই দেশের সমান স্বার্থ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিএসটিআই) সনদকে ভারতের স্বীকৃতি অর্জনের উদ্যোগ নিতে হবে। ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ৪৫ বছর’ শীর্ষক এক সিম্পোজিয়ামে গতকাল বক্তারা এসব কথা বলেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের (বিলিয়া) সম্মেলন কক্ষে এ সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্যের জন্য অশুল্ক বাধাগুলো নিরসন করতে হবে। এছাড়া জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালুর পাশাপাশি ভারতেও বাংলাদেশি চ্যানেল প্রচারের সমান সুযোগের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় আলোচনায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আকমল হোসেন এ সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন। এতে ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: ৪৫ বছরের বন্ধুত্বের উদযাপন’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক আমেনা মোহসীন, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক মোহাম্মদ ইউনুস। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সভাপতি অধ্যাপক এহসানুল হক, একই বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমীন, সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান, হুমায়ুন এ কামাল, মুহসীন আলী খান প্রমুখ।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে আবেগ, বাস্তবতা দুটোই আছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা কোনোভাবেই ভোলার নয়। এতে ভারতীয়রাও রক্ত দিয়েছেন। এটাই আমাদের সম্পর্কের আবেগগত ভিত্তি। অন্যদিকে বাস্তবতা হলো, ৪৫ বছরে সম্পর্ক ওঠানামা করেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যও আছে। স্থলসীমান্ত চুক্তি ও সমুদ্রসীমা চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের আটকে থাকা সমস্যা সমাধান হয়েছে।’ সাবেক এ কূটনীতিক আরও বলেন, সীমান্ত সমস্যা সমাধানে দুই দেশকে আরও কৌশলী হতে হবে। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, ভিসা সমস্যা সহজীকরণসহ নানা সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন শুধু নিরাপত্তাগ্রহীতা নয়, নিরাপত্তাদাতাও। আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তা দিচ্ছি, ভারত মহাসাগরেও দিচ্ছি।’
অধ্যাপক আমেনা মোহসীন বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কথা মাথায় রেখে আঞ্চলিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এ অঞ্চলের বৃহৎ শক্তি হিসেবে ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বাংলাদেশ ভারসাম্য রক্ষা করছে বলেও তিনি অভিমত দেন।
মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, দুই দেশের মধ্যে দারুণ সম্পর্কের পরও দুদেশের মধ্যে পানিবণ্টনের মত বৃহৎ বিষয়ে সমাধান হচ্ছে না। ভারতের বিপুল পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশে আসছে। অথচ বাংলাদেশের পণ্য সেখানে গিয়ে মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছে না। ভারতে বিএসটিআই’র সনদপত্রের গ্রহণযোগ্যতা নেই। এটি গ্রহণ করার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক পরিচালিত হয় দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর। এক্ষেত্রে দুই দেশই অন্যের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে সম্পর্ক উন্নয়ন সহজ হয়। এজন্য অভিন্ন নদীগুলোর পানি ন্যায্য অংশ অর্জন করা, বাজার সম্প্রসারণ করা, শান্তিপূর্ণ সীমান্ত ও ট্রানজিটের মাধ্যমে আর্থিক সম্ভাবনার দিকে আরও নজর দিতে হবে।