শেয়ার বিজ ডেস্ক : সুদানের দারফুর অঞ্চলে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর এল-ফাশের শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেছে। পালিয়ে বেঁচে আসা অনেকেই জানিয়েছেন খুন-ধর্ষণ-নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
প্রায় দেড় বছর অবরুদ্ধ থাকার পর গত সপ্তাহে উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশের সুদানি সেনাবাহিনীর হাত থেকে আরএসএফের দখলে যায়। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো এরপর থেকে বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তাওইলা শহরে পালিয়ে যাওয়া তরুণ আলখেইর ইসমাইল জানান, পালানোর সময় ৩০০ মানুষের একটি দলকে থামায় আরএসএফ সদস্যরা। এক সহপাঠী ইসমাইলকে চিনে ফেলায় কেবল তাকেই বাঁচিয়ে রাখা হয়। ‘আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণকে তারা মেরে ফেলেছিল,’ বলেন তিনি।
তাহানি হাসান নামে এক নারী বলেন, হঠাৎ তিনজন আরএসএফ সদস্য এসে আমাদের থামায়, মারধর করে, কাপড় ছুড়ে ফেলে দেয়। এমনকি আমাকেও তল্লাশি করা হয়। যারা আমাকে আঘাত করেছে, তারা আমার মেয়ের থেকেও ছোট।
ফাতিমা আবদুল রহিম বলেন, তিনি নাতি-নাতনিদের নিয়ে পাঁচদিন হেঁটে তাওইলায় পৌঁছেছেন। ‘তারা আমাদের ছেলেদের পেটায়, সব কিছু নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি, আমাদের পেছনের দলে থাকা মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছে,’ জানান তিনি।
জাতিসংঘের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংস্থা ইউএনএফপিএ জানিয়েছে, এল-ফাশের মাতৃত্ব হাসপাতালে গত ২৯ অক্টোবর অন্তত ৪৬০ জনকে হত্যা করেছে আরএসএফ যোদ্ধারা। নিহতদের মধ্যে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী, আশ্রয়প্রার্থী ও দর্শনার্থীও ছিলেন।
পালিয়ে আসা অনেকের বক্তব্যে জানা যায়, আরএসএফ সদস্যরা মানুষকে বয়স, লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয় অনুযায়ী আলাদা করে মুক্তিপণ দাবি করতো। এর পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ থেকে ৩০ লাখ সুদানি পাউন্ড (প্রায় ৮-৫০ হাজার মার্কিন ডলার)। মুক্তিপণ দিতে না পারলে হত্যা করা হতো।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)-এর হিসাব অনুযায়ী, এল-ফাশের থেকে পাঁচদিনে মাত্র পাঁচ হাজার মানুষ তাওইলায় পৌঁছেছে, যদিও পালাতে চেয়েছিল ৬০ হাজারের বেশি। সংস্থাটির জরুরি বিভাগ প্রধান মিশেল অলিভিয়ার লাশারিতে বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, যারা আসতে পারেনি তাদের হত্যা করা হয়েছে, থামিয়ে দেয়া হয়েছে বা তাড়া করে মারা হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী উত্তর কর্ডোফান রাজ্যের বারা শহরও সম্প্রতি আরএসএফের দখলে গেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখান থেকে অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ পালিয়েছে। বারায় রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ স্বেচ্ছাসেবীকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে আরএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের মুখপাত্র মোহাম্মদ এলশেইখ বলেন, বাঁচতে পালিয়ে আসা মানুষজন ভয়াবহ অবস্থায় আছে। দিনে প্রচণ্ড গরম, রাতে কনকনে ঠান্ডা এই মরুভূমির মধ্যে বহু কিলোমিটার হেঁটে তারা এল-ওবেইদে পৌঁছাতে চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, চলমান এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে।
এস এস/
প্রিন্ট করুন





Discussion about this post