নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের কাস্টমস ও ভ্যাট সম্পর্কে ঢালাওভাবে অভিযোগ না দিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে গতকাল এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান এ অনুরোধ জানান। আজ সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস। এবার কাস্টমস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘তথ্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং তথ্য ইকোসিস্টেম বিনির্মাণের মাধ্যমে ডিজিটাল কাস্টমসের সম্প্রসারণ’।
সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা চেম্বারের সভাপতি ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্বারা তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ আমাদের কাছে করেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে দেখুন আমরা প্রতিকার করি কিনা? অভিযোগ করার পেছনের কারণগুলো আমরা কি কখনও শুনেছি বা দেখেছিÑপ্রশ্ন করেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ঢালাওভাবে অভিযোগ করা হয় যে, আমার পণ্য ছাড়া হচ্ছে না। কোনো অভিযোগ থাকলে আমার কাছে এসে করেন, তারপর দেখেন প্রতিকার করি কিনা।’
করোনার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য শুল্ককর মওকুফ করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা কাস্টম হাউস অ্যান্টিজেন্ট টেস্ট কিট থেকে ৩২ শতাংশ হারে শুল্ককর আদায় করছে বলে অনেক আমদানিকারক অভিযোগ করেছেন। কিট ছাড় করাতে না পারায় এক মাস ধরে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশে টেস্ট কিটের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসআরও করে দেয়ার পরও কাস্টম হাউসের এত সাহস হবে না যে, এ এসআরও’র অপব্যবহার করবে। এসআরও’র সুবিধা নেয়ার জন্য কিছু শর্ত দেয়া আছে। সেই শর্তের মধ্যে একটি শর্ত হলো, ঔষধ প্রশাসন থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। সেই প্রত্যয়নপত্র না আনলে তো কাস্টমস পণ্য ছাড়তে পারে না। যারা প্রত্যয়নপত্র আনতে পেরেছে তাদের পণ্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অযথা সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি করা হয়Ñএমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘জেনারেল কথা কেন বলেন? এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লিখিত আকারে দিতে বলেন। আমরা ব্যবসায়ীদের আহ্বান করছি যে, কখন, কবে কোন ঘটনা ঘটেছে, হয়রানি করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতিদিন সাড়ে সাত হাজার বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়। এর মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি হচ্ছে রপ্তানি-সংক্রান্ত, আর দুই হাজারের মতো আমদানি বিল অব এন্ট্রি। দুই হাজার বিল অব এন্ট্রির মধ্যে দুই-একটিতে হয়তো চালান ছাড়ে বিলম্ব হতেই পারে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকগুলো সংস্থার প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাণিজ্য প্রতিযোগিতার বিষয়টি কাস্টমসকে সব সময় মাথায় রাখতে হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য প্রতিযোগিতা, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রে যে আরও তীব্র আকার ধারণ করবে, তা থেকে উত্তরণের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মোকাবিলায় কাস্টমসও কাজ করছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বাধা আসবে আমদানি-রপ্তানি তথা কাস্টমসের ক্ষেত্রে। কাস্টমসের আয় অবধারিতভাবে কমে আসবে। কাস্টমসের যে আয় হ্রাস হবে, তা আমরা পূরণ করব অভ্যন্তরীণ সম্পদ তথা ভ্যাট ও আয়কর থেকে। যত আমরা উন্নত হবো, তত আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়বে। এতে আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়বে, যা থেকে আমাদের আয়কর ও ভ্যাট আহরণের ক্ষেত্র তৈরি হবে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকার শুল্ক আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে শুল্ক খাতে ৭৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। এবার শুল্ক বিভাগের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা, সদস্য (শুল্কনীতি) মো. মাসুদ সাদিক, সদস্য (শুল্ক: নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) ড. মো. সহিদুল ইসলাম, সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) শাহীন আক্তার, সদস্য (কর অব্যাহতি) মো. আবদুল মজিদ, ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।