প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

সুশাসন নিশ্চিত করলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে

রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে চালকসহ ২০ জন মারা গেছেন। গতকাল এটি ছিল গণমাধ্যমের প্রধান খবর। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের বাসটি পদ্মা সেতুতে ওঠার আগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে ছিটকে পড়ে। এরপর কমপক্ষে ১০০ ফুট নিচে আন্ডারপাসের দেয়ালের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়।

খবরের তথ্য, ইমাদ পরিবহনের বাসগুলো খুলনা, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরা থেকে রাজধানী ঢাকায় চলাচল করে। পরিবহন কোম্পানিটির চালকদের বাস চালাতে হয় অনেকটা বিরামহীনভাবে। দুর্ঘটনাকবলিত বাসের চালক জাহিদ হাসানকেও বাস চালাতে হতো ক্লান্ত দেহে, চোখে ঘুম নিয়ে। বিশ্রামের ফুরসত পেতেন না বললেই চলে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন চালক। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানিয়েছে, বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল।

সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদককে ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির বাস যারা চালান, তাদের বিশ্রামের জন্য প্রতিটি জায়গায় আমাদের ঘর রাখা আছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালক ক্লান্ত ছিলেন, তিনি এমন কথা আমাদের কাউকে জানাননি।

প্রতিটি দুর্ঘটনার অনেক বিষয় সামনে আসে। এখানেও এসেছে। যেমনÑ চালকদের বাস চালাতে হয় বিরামহীনভাবে, বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না, ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল, যাত্রীদের বারণ সত্ত্বেও চালক জোরে বাস চালান, বাসটির গতিনিয়ন্ত্রকও ভালোমতো কাজ করছিল না ইত্যাদি।

প্রতিটি অপমৃত্যুই বেদনাদায়ক। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছেন যারা; তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। যেমন এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো সিঙ্গাপুর মোস্তাক আহমেদের স্ত্রী বলেন, ‘আমার ছোট ছোট দুই পোলা লইয়া কই যামু আমি। স্বামী ছাড়া আমাগো দেখার কেউ নাই। আল্লাহ তুমি আমারে মরণ দিতা।’

লক্কড়ঝক্কড় বাস সড়কে দাবড়ে বেড়ায়; দেখার কেউ নেই।  এখন একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষেই বাস মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু দুর্ঘটনার আগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বাসের চালক ক্লান্ত; এটি জানাতে হবে কেন। টানা গাড়ি না চালানোর  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কি কাগজ-কলমেই থেকে যাবে! রাজধানীতে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পর জানা গেছে, গাড়ির ফিটনেস ছিল না; চালানোর অনুমতি ছিল না।    কী কারণে আমাদের সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না, এটি আর অজানা নয়। সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি কমাতে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আমরা মনে করি। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং  আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিআরটিসির উচিত হবে অভিলক্ষ অনুযায়ী সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অংশীজনের সচেতনতা বৃদ্ধি, যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, পরিবেশবান্ধব আধুনিক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা  নেয়া।