প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

সেচের খরচ বৃদ্ধিতে বিপাকে যশোরের বোরো চাষিরা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: সেচনির্ভর বোরো আবাদের মাঝামাঝি সময়ে এসে বিদ্যুৎ ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন যশোরের চাষিরা। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনেকটা ভালো হওয়ায় বোরোর ফলন নিয়ে কৃষক আশাবাদী হলেও বোরো চাষাবাদ পুরোটায় সেচনির্ভর হওয়ায় একদিকে, সেচ বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে গত বছরের তুলনায় সার-কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে সামগ্রিক চাষের খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় চাষের খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে যশোরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমি। সেখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও ১ হাজার হেক্টর জমি বেড়ে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার জমি। জেলার ৮ উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠের বোরোর ক্ষেত এখন ধানের কুশি ও থোড় গজিয়ে এক অপূরূপ সৌন্দর্যে পরিণত হয়েছে। আর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই এসব ধান কৃষক ঘরে তুলতে পারবেন। তবে এ বছর চাষে বাড়তি খরচ হওয়ায় চাষিদের খরচ মেটাতে গিয়ে রীতিমতো ঘাম ঝরছে। ফলে সামনে ধানের ন্যায্যমূল্যে না পেলে কৃষকের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি নিয়েও তারা আগাম ভাবছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিএডিসি সেচ বিভাগের তথ্যমতে, জেলার ৮ উপজেলায় প্রায় ৮১ হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর বাইরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, পৌরসভার আওতায় আরও প্রায় ৫০ হাজার হাজার গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচপাম্পগুলো এখন বোরো ক্ষেতকে স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহার করছে। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ মেটানোর পাশাপাশি সার-কীটনাশক ও বাড়তি শ্রম খরচ জোগাড় করতে কৃষককে অতিরিক্ত চাপ বহন করতে হচ্ছে।

জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের চাষি শামসুর রহমান বলেন, এ বছর বোরোর খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অন্যান্য বছরে হেক্টর প্রতি বোরো আবাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার খরচ হলেও এখন তা প্রায় লাখের ওপর চলে যাচ্ছে। সার-কীটনাশক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, বোরো আবাদে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। যে কারণে ভালো ফলনের আশাও করা হচ্ছে। তবে শেষ সময়ে কোনো দুর্যোগ ধান ঘরে তুলতে পারাসহ কাক্সিক্ষত বাজারদর পাব কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা।

একই কথা বলেন, কৃষক শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত বছর বোরো মৌসুমে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৮০ টাকা থাকলেও চলতি বছর ১০৯ টাকা, যা লিটার প্রতি ২৯ টাকা বেশি। এছাড়া গত ৩ মাসে গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার বড় প্রভাব পড়েছে বোরো আবাদে সেচ কার্যক্রমে। অন্যদিকে গত বছর বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ১৬ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা ২২ টাকায় কিনতে হচ্ছে, যা প্রতি কেজিতে ৬ টাকা বেশি। এসব খরচ মেটাতে গিয়ে আমরা চরমভাবে হিমশিম খাচ্ছি।

যশোর সদর উপজেলার বোরোচাষি হাদিউজ্জামান বলেন, এ বছর আমন মৌসুমে ধানের বাজার ভালো পাওয়ায় বোরো আবাদ করেছি। কিন্তু খরচ এত বাড়বে তা আগে কখনও বুঝতে পারেনি। এমনিতে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেশি। সঙ্গে কৃষি উপকরণের দামও। এমন অবস্থায় সংসারের অন্যসব খরচ মেটানোর পাশাপাশি বোরোর বাড়তি খরচ মেটাতে গিয়ে রীতিমতো মাথায় হাত উঠেছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এ বছর যশোরের বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি। বোরো চাষের জন্য আবহাওয়া শতভাগ অনুকূলে থাকায় কোনো পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। যে কারণে নিকট-অতীত যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো ফলনের আশা করছেন চাষিরা। তিনি বলেন, আমন মৌসুমে কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পাওয়ায় তারা বোরো আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। আশা করা যায় সামনেও তারা ধানের ভালো দাম পেয়ে উৎপাদন ব্যয় মিটিয়ে লাভবান হবেন।