প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

সেনাদের অনিয়ম আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই

শেয়ার বিজ ডেস্ক : জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। শুনানিতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও কোনোভাবেই একে গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তার দাবি, দেশের সেনাসদস্যরা নিয়ম ভেঙে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচারব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল স্থানীয় সময় বুধবার রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে নিজ দেশের পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। খবর: বিবিসি।

সু চি বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযানে যা ঘটেছে, তা গণহত্যার সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যে কারণে জাতিসংঘের আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলা কেবলই ভুল দিককে নির্দেশ করছে। গাম্বিয়া রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সচিত্র বর্ণনা উপস্থাপন করেছে, যা কেবলই পরিস্থিতির বিবেচনায় ভুল দিককে নির্দেশ করে।

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমারের নেত্রী বলেন, রাখাইনে কোনো গণহত্যা ঘটেনি, সেখানে আরসার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে সে দেশের সেনাবাহিনী। রাখাইনে সেনা অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ হয়তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে এর পেছনে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল, এমনটা ধরে নেওয়া মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতার সঙ্গে ঠিক হবে না। তবে মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, সামরিক আদালতে অপরাধী সেনাসদস্যদের বিচার হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ঘটনায় সেনাসদস্যদের সাজা পাওয়ার কথাও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে জানান তিনি।

শুনানিতে মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশের বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ জানিয়ে অং সান সু চি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রধান বাসভূমি রাখাইন প্রদেশে গোলযোগের ইতিহাস কয়েক শতাব্দীর এবং এ সংঘাতকে আরও গভীর করতে পারে এমন কিছু না করতে আইসিজে’র প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। এরপর গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে মিয়ানমার এতদিন যা বলে আসছে, সেই একই কথা আইসিজের বিচারক প্যানেলের সামনে নতুন করে বলেন সু চি।

মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের কারণে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া অং সান সু চি একসময় ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে নন্দিত ব্যক্তিত্ব কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ভূমিকার কারণে সেই তিনিই বিশ্বের বহু দেশের নিন্দা ও ধিক্কারের পাত্র হন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সু চিকে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করে নেয়। গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে সু চির হাজিরাকে তাই এক নাটকীয় ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

এর আগে আইসিজেতে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাবিষয়ক মামলাটি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংস্থা ওআইসির প্রতিনিধি হিসেবে দায়ের করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই গাম্বিয়া মামলাটি দায়ের করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবকর।

প্রক্রিয়ার শুরুটা হয় গত বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ওআইসি মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনে গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্থলে দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদোকে পাঠানোর মধ্য দিয়ে। ঢাকায় পৌঁছার পর আবুবকর অন্য দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সফর করেন। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য গাম্বিয়ার নেতৃত্বে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয় ওআইসি। সেখানে এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় গাম্বিয়াকে। বাংলাদেশসহ ওআইসির সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে গাম্বিয়া গত ১১ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করে।