শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫
৩০ কার্তিক ১৪৩২ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭
  • ♦ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শেয়ার বিজ
Advertisement
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ
➔ ই-পেপার
No Result
View All Result
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ
No Result
View All Result
শেয়ার বিজ
No Result
View All Result

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারি

Share Biz News Share Biz News
মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫.১২:০২ পূর্বাহ্ণ
বিভাগ - পত্রিকা, সম্পাদকীয় ➔ প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন
A A
13
VIEWS
Share on FacebookShare on TwitterShare on Linkedin

ড. মাহরুফ চৌধুরী : শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির বিস্তীর্ণ অঙ্গনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এমন এক আলোকবর্তিকা, যার নাম উচ্চারণেই জ্বলে ওঠে এক নৈতিক ও মননশীল দীপ্তি। আমাদের জাগতিক জীবনে তার মৃত্যু কেবল এক প্রতিভাবান শিক্ষক, সাহিত্যিক, সমালোচক বা চিন্তাবিদের প্রয়াণ নয়; এ যেন এক প্রজ্ঞাময় যুগের অবসান। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই এমন এক অধ্যাপক, যিনি পাণ্ডিত্যকে সীমাবদ্ধ রাখেননি পাঠ্যবইয়ের পাতায়। ফলে তার প্রতিটি ক্লাসরুম ছিল এক মুক্ত চিন্তার কর্মশালা, যেখানে জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হতো মানবিকতা, নৈতিক বোধ ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা। তার পাঠ ছিল একধরনের শ্রেয়চেতনার আলোকিত সাধনা, যেখানে শিক্ষার্থী কেবল তথ্য অর্জন করত না; বরং আত্মসচেতনতা, মানবিক বোধ ও স্বাধীন চিন্তার প্রশিক্ষণ লাভ করত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর রাজনৈতিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক কাঠামোর মধ্যেও তিনি ছিলেন মুক্তচিন্তার অনুশীলক ও অভিভাবক, যিনি তার শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছেন জ্ঞান মানে শুধু তথ্য কিংবা তত্ত্ব মুখস্থ করা নয়, বরং প্রশ্ন তোলা, যুক্তি নির্মাণ ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়া। এই গুণেই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলাদেশের বৌদ্ধিক পরিসরে হয়ে উঠেছিলেন এক অনন্য উপস্থিতি; ভদ্রতা ও নম্রতায় হূদ্য প্রজ্ঞা, সততা ও মানবিকতার এক দীপ্ত প্রতীক।

শ্রেণিকক্ষে কিংবা যে কোনো বক্তৃতার মঞ্চে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের উপস্থিতি ছিল যেন এক বৌদ্ধিক উদ্‌যাপন। তার শ্রেণিকক্ষে বক্তৃতা ছিল কেবল পাঠ নয়; ছিল শিক্ষার্থী বা অংশগ্রহণকারিদের জন্য চিন্তার জাগরণ, নৈতিকতার অনুশীলন, আর মানবিকতার প্রশিক্ষণ। শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ হতো তার কণ্ঠে, তার শব্দচয়ন ও ব্যাখ্যার গভীরতায়; প্রতিটি বক্তৃতায় তিনি যেন সত্য, সৌন্দর্য ও কল্যাণের এক অনন্য মেলবন্ধন ঘটাতেন। তিনি ছিলেন সেই শিক্ষক, যিনি কেবল জ্ঞানের সরবরাহকারী নন, বরং শ্রেয়চেতনার প্রেরণাদাতা হিসেবে যিনি শিখিয়েছেন সততা, যুক্তিবোধ এবং সহমর্মিতার মর্মার্থ। তার পাঠদানে বিশ্বসাহিত্যের চরিত্ররা যেমন জীবন্ত হয়ে উঠত, তেমনি সমাজ, রাজনীতি ও নৈতিকতার জটিল প্রশ্নও আলোচিত হতো গভীর দার্শনিক ও নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে। তিনি ছিলেন এমন এক শিক্ষক, যিনি জ্ঞানকে কেবল বৌদ্ধিক অর্জন নয়, বরং আত্মার বিকাশ হিসেবে দেখতেন। এক অর্থে তার শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ছিল সক্রেটিসের ‘ডায়ালগ’-এর আধুনিক প্রতিরূপ, যেখানে প্রশ্ন ছিল জ্ঞানের সূচনা, আর আলোচনাই ছিল মানবতার পথে যাত্রার আয়োজন।

১৯৯৫ সালের দিকে ইংরেজি শেখার একটি বিশেষ কোর্সে তাকে পেয়েছিলাম শিক্ষক হিসেবে। তার সরাসরি ছাত্র হওয়ার যে সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, সেটিই ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এ কোর্সে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষক নয়, সমকালীন চিন্তাচেতনার তুলনায় প্রাগ্রসর একজন গভীর মানবিক চেতনার চিন্তাবিদকে জানার অভিজ্ঞতা। অল্প কয়েকটি পাঠেই বুঝে গিয়েছিলাম, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম জ্ঞানকে কখনো শিক্ষকতার পেশায় কিংবা শ্রেণিকক্ষের পরিসীমায় বন্দি রাখেননি; তিনি তাকে জীবনের এক নৈতিক অনুশাসন, এক মানবিক সাধনা হিসেবে ধারণ করেছিলেন। তার শ্রেণিকক্ষের বাইরে তার ব্যক্তিগত কক্ষে একান্ত সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা আমার মনে এক গভীর ও স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। ভাষা ও সাহিত্যের আলোচনার পাশাপাশি সমকালীন শিল্প, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে তার গভীর বিশ্লেষণ দেখিয়েছে যে, কীভাবে একজন প্রকৃত বুদ্ধিজীবী সমাজের প্রতিটি পরিবর্তনকে আত্মস্থ করেন, তা নিয়ে ভাবেন এবং তার নৈতিক তাৎপর্য অনুসন্ধান করেন।

তার কক্ষে বসে কথা বলার অভিজ্ঞতা ছিল যেন এক উন্মুক্ত জ্ঞানের জগতে প্রবেশের মতো, যেখানে অহংকার, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা মানসিক প্রতিরোধের কোনো স্থান নেই। সেখানে শুধু ছিল জ্ঞানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, শিক্ষার্থীর প্রতি আন্তরিক মমতা এবং চিন্তার অনন্ত দিগন্তে অবারিত আহ্বান। তিনি প্রতিটি আলাপচারিতাকে এক ধরনের শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে দেখতেন যেখানে প্রশ্ন তোলা, মতামত শোনা এবং ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করা ছিল পাঠের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার এই সংলাপমুখী পদ্ধতিই শিক্ষার্থীদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, তাদের ভেতরে নিহিত সম্ভাবনার আলোকে জাগ্রত করে, সে কক্ষে বসে বোঝা যেত। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বিশ্বাস করতেন যে, প্রতিটি শিক্ষার্থী এক সম্ভাবনাময় সত্তা এবং তার দায়িত্ব হলো সেই সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করে আলোকিত করা। তার বিনয়, মানবিকতা ও বিনিময়ভিত্তিক শিক্ষাদর্শন শিক্ষার্থীর মননশীলতার আকাশকে প্রসারিত করত এবং জ্ঞানকে কেবল তথ্যের সঞ্চয় নয়, বরং জীবনচর্চার এক শিল্প হিসেবে উপলব্ধি করাত। সেই থেকে আমার কাছে তিনি রয়ে গেছেন এক কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাগুরুর প্রতীক; একজন বিনয়ী, আন্তরিক ও আলোকিত শিক্ষক হিসেবে যিনি কেবল আমাদেরকে ইংরেজি ভাষাই শেখাতেন না, বরং দিতেন জীবনকে বোঝার ও উপলব্ধি করার নিত্যনতুন সূত্র।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মে যেমন প্রতিফলিত হয়েছে সমাজবীক্ষণের সূক্ষ্ম দৃষ্টি ও নৈতিক চেতনার পরিশীলন, তেমনি তার শিক্ষকতাও ছিল গভীর মানবিক মূল্যবোধে আবিষ্ট। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সাহিত্য কেবল কল্পনার রূপ বা ভাষার কারুকাজ নয়; এটি মানুষের আত্মাকে স্পর্শ করার এক নৈতিক অনুশীলন, যা পাঠককে করে তোলে সংবেদনশীল, ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় এবং মানবিকতার পথে দায়বদ্ধ। তাই সাহিত্যের পাঠে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতেন শুধু কাহিনির কাঠামো বা চরিত্র বিশ্লেষণে নয়, বরং পাঠের অন্তর্নিহিত নৈতিক তাৎপর্য অনুধাবনে। আর সে কারণেই শিক্ষার্থীদের মতে, তার শ্রেণিকক্ষে সাহিত্য হয়ে উঠত এক আধ্যাত্মিক যাত্রা, যেখানে তারা আবিষ্কার করত জীবনের জটিল সত্য, সামাজিক বৈষম্যের নির্মমতা এবং নৈতিক দায়িত্বের মর্মবেদনা। তার মতে, ‘ভালো সাহিত্য আমাদের শেখায় আমরা মানুষ এবং এই মানুষ হওয়াটাই এক অনন্ত সাধনা।’ এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে প্রথাগত পণ্ডিত বা শিক্ষকের সীমা অতিক্রম করে এক জীবনদ্রষ্টা গুরুর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। তার সাহিত্যচর্চা ও শিক্ষকতা পরস্পরকে পরিপূর্ণ করেছে, যাতে একদিকে ছিল চিন্তার স্বাধীনতা, অন্যদিকে ছিল নৈতিক বোধের শুদ্ধতা। তাই তিনি কেবল ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন না; তিনি ছিলেন জীবনপাঠেরও এক উজ্জ্বল দিশারি।

বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায়ই সমান স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন এক বিরল দ্বিভাষিক সৃষ্টিশীল মননের অধিকারী। তাই তার অনুবাদে বিশ্বসাহিত্যের রচনাগুলো যেন নতুন প্রাণ পেত। তার হাতে ভাষা হয়ে উঠত কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ভাব ও অনুভূতির সেতুবন্ধ। তার অনুবাদে পাঠক আবিষ্কার করত এক অভূতপূর্ব সামঞ্জস্য তথা ভাষার সৌন্দর্য, চিন্তার গভীরতা এবং নৈতিক সংবেদনশীলতার অনবদ্য মেলবন্ধন। তিনি অনুবাদকে কেবল কারিগরি প্রয়াস হিসেবে দেখেননি; দেখেছেন এক মানবিক দায়িত্ব হিসেবে, যার মাধ্যমে বিশ্বমানবতার চেতনা পৌঁছে যায় আমাদের সংস্কৃতির ভেতরেও। তার এই আন্তঃসাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে সমকালীন তরুণ লেখকদের। তার লেখার শৈলী, ভাবনার প্রজ্ঞা ও দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা অনেক নবীন সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচকের কাছে হয়ে উঠেছে এক ধরনের দিকনির্দেশনা। তারা দেখেছেন, কীভাবে সাহিত্য ও শিল্প হতে পারে নৈতিক অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্র, কীভাবে অনুবাদ হতে পারে এক সাংস্কৃতিক সংলাপের প্রক্রিয়া। এভাবেই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কেবল একজন অনুবাদক, সাহিত্যিক কিংবা সমালোচক নন, বরং এক সেতুবন্ধ নির্মাতা হিসেবে যিনি ভাষা ও সংস্কৃতির সীমা অতিক্রম করে মানবতার অভিন্ন সুরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।

তার সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরাসহ শুভানুধ্যায়ীরা যেভাবে স্মরণ করেছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে, যাতে প্রতিফলিত হয় এক মানবিক চরিত্রের বিরল স্বচ্ছতা—অসাধারণ বিনয়, কঠোর নৈতিকতা, সততার প্রতি অটল বিশ্বাস এবং জ্ঞানের প্রতি আজীবন নিষ্ঠা। এই গুণগুলোই তাকে আলাদা করে তুলেছিল এমন একসময়ে, যখন জ্ঞান অনেকাংশে পেশাগত প্রতিযোগিতা, সাফল্যের মাপকাঠি বা আত্মপ্রদর্শনের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। তিনি নিভৃতচারী ও নিরহংকারী চারিত্রিক স্বভাবে এসব প্রবণতার বাইরে অবস্থান করে জ্ঞানচর্চাকে দেখেছেন মানবমুক্তির এক নিরন্তর যাত্রা হিসেবে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কাছে জ্ঞান ছিল না ক্ষমতা অর্জনের উপকরণ, বরং আত্মশুদ্ধি ও সামষ্টিক কল্যাণে সামাজিক ন্যায়ের পথ। তিনি বিশ্বাস করতেন, জ্ঞান যদি মানুষকে বিনয়ী না করে, তবে তা কেবল বুদ্ধির খেলা—আলো নয়, অন্ধকারেরই আরেক রূপ। তার জীবন ছিল সেই বিশ্বাসের বাস্তব রূপায়ণ যেখানে শিক্ষকতা ছিল এক নৈতিক সাধনা আর পাঠদান ছিল আত্ম-উন্নয়ন ও মানবমুক্তির দিকনির্দেশনা। তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রকৃত প্রজ্ঞা অহংকারে নয়, বিনয়ে; প্রতিযোগিতায় নয়, সহযোগিতায়; এবং নিজেকে নয়, অন্যকে জাগিয়ে তোলার মধ্যেই নিহিত।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন এমন এক শিক্ষক যিনি নৈতিকতাকে সীমাবদ্ধ রাখেননি ব্যক্তিগত সততার গণ্ডিতে। তার কাছে নৈতিকতা মানে ছিল সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং মানবকল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতি। তিনি তার ছাত্রদের শিখিয়েছেন, জ্ঞান যদি সমাজকে স্পর্শ না করে, তবে তা অসম্পূর্ণ; আর শিক্ষিত হওয়া মানে কেবল তথ্য জানা নয়, বরং সেই তথ্যের নৈতিক প্রয়োগ জানা ও সে অনুসারে কাজ করা। তার এক বিখ্যাত উপদেশ, ‘শিক্ষিত হওয়া মানে কেবল তথ্য জানা নয়, বরং সঠিক প্রশ্ন করতে পারা’ শিক্ষার্থীদের কাছে তার শিক্ষকতার দর্শনের মর্মবাণী হিসেবে অনুরণিত হতে থাকবে জীবনের শেষ দিন অবধি। এই এক বাক্যের ভেতরেই নিহিত তার শিক্ষাচিন্তার সারবস্তু তথা শিক্ষা হলো প্রশ্নের সাহস, নৈতিক অবস্থানের দৃঢ়তা এবং সত্য অনুসন্ধানের এক অন্তহীন যাত্রা। তিনি চেয়েছিলেন এমন এক প্রজন্ম গড়ে তুলতে, যারা মুখস্থ বিদ্যায় নয়, বরং সমালোচনামূলক চিন্তা ও মানবিক দায়িত্ববোধে আলোকিত হবে। তার শ্রেণিকক্ষে তাই প্রতিটি পাঠই ছিল সমাজ, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি নতুন প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা ওকল্যাণময় ভবিষ্যতের হাতছানি।

শিক্ষক, সাহিত্যিক, সমালোচক ও নৈতিক চেতনার দিকনির্দেশক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম একজন প্রজ্ঞাময় অধ্যাপক হিসেবে জীবনের প্রতিটি পাঠে শিক্ষার্থীদের ভেতরে আলো জ্বালিয়েছেন। তাই তার মৃত্যু যেন জাতীয় জীবনে প্রভাববিস্তারকারী এক আলোকবর্তিকার নিভে যাওয়া। কিন্তু বিরোধসাপেক্ষে (প্যারাডক্সিক্যালি), এই নিভে যাওয়া আলোই রেখে গেছে অসংখ্য আলোকরেখা, যা আমাদের ভবিষ্যতের পথচলায়পাথেয় হয়ে থাকবে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কেবল এক শিক্ষক ছিলেন না, জাতীয় সংস্কৃতির ফল্গুধারায় ছিলেন এক বৌদ্ধিক ও নৈতিক আলোকস্রোত, যিনি দেখিয়েছেন যে জ্ঞানের আসল উদ্দেশ্য কেবল জানার আনন্দ নয়, বরং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস। আজ যখন সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, অসহিষ্ণুতা, আত্মকেন্দ্রিকতা ও ভোগবাদ ক্রমেই প্রাধান্য পাচ্ছে, তখন তার জীবন ও চিন্তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জ্ঞান যদি নৈতিকতার সঙ্গে যুক্ত না হয়, তবে তা মানুষকে মুক্ত করে না, বরং আরও বন্দি করে। তার বৌদ্ধিক উত্তরাধিকার তাই আমাদের জন্য এক নৈতিক মানচিত্রযেখানে শিক্ষা মানে কেবল পেশাগত প্রস্তুতি নয়, বরং মানবমুক্তির এক নীরব সাধনা। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু তার চিন্তার দীপ্তি, মানবিকতার উষ্ণতা, আর নৈতিকতার সাহস আজও আমাদের শেখায় কীভাবে অন্ধকারেও গভীর আত্মপ্রত্যয়ে আলো জ্বালিয়ে রাখা যায়।

তিনি এখন আর শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে বেঁচে নেই; কিন্তু তার লেখনী, শ্রেণিকক্ষের স্মৃতি, উচ্চারণের মায়াময় ধ্বনি, হাস্যোজ্জ্বল মুখতার অগণিত শিক্ষার্থীদের মনোজগতে বাকি জীবনও জীবন্ত, স্পন্দমান থাকবে। তার ব্যবহূত প্রতিটি বাক্য, তার ধরিয়ে দেয়া প্রতিটি চিন্তাসূত্র শিক্ষার্থীদের জীবনে তার উপস্থিতির সাক্ষ্য বহন করে। তাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন এবং থাকবেন এক মননশীলতার বাতিঘর হয়ে। তিনি দেখিয়েছেন একজন প্রকৃত শিক্ষক কেবল পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দেন না, বরং শিক্ষার্থীর ভেতরে জ্ঞানের আলো জ্বালান; এমন এক আলো, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অতিক্রম করে জ্ঞান বিকাশ ও বিস্তারের ছিলছিলায় মানবতার দিকনির্দেশনা হয়ে থাকে। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, শিক্ষকতা কোনো পেশা নয়; এটি এক নৈতিক দায় ও প্রতিশ্রুতি, এক মানবিক অঙ্গীকার। তার কর্মময় জীবনের উদাহরণগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একজন শিক্ষক যদি সত্যনিষ্ঠা, যুক্তিবোধ ও সহমর্মিতায় দৃঢ় থাকেন, তবে তিনি শুধু তার শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো জাতিকেও আলোকিত করতে পারেন। সেই অর্থে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কেবল একজন শিক্ষক, সাহিত্যিক, সমালোচক কিংবা অনুবাদকই নন, তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক অনন্য চেতনার স্থপতি, যিনি অবক্ষয়ের চোরাবালিতেও আলো জ্বেলে গেছেন নীরবে, সুন্দর ও সমৃদ্ধ আগামীর অবিচল বিশ্বাসে। আর তার উত্তরসূরিদের দায় এখন সেই আলোকে বয়ে বেড়ানো, আর সেই আলোয় জাতিকে আলোকিত করে তোলার।

 

ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য

mahruf@ymail.com

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন
Previous Post

বিনিয়োগবান্ধব টেকসই পদক্ষেপ নেয়া হোক

Next Post

বোয়িং ৭৩৭কে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এলো এয়ারবাসের এ৩২০

Related Posts

শীতের আগমনে পর্যটকে মুখর কক্সবাজার
জাতীয়

শীতের আগমনে পর্যটকে মুখর কক্সবাজার

অর্থ ও বাণিজ্য

আর্টিমিয়া-লবণের সমন্বিত চাষে চবির সাফল্য

বিশ্ববাজারে ফের  বাড়ল স্বর্ণের দাম
অর্থ ও বাণিজ্য

ভরিতে বাড়ল ৫,২৪৮ টাকা

Next Post
বোয়িং ৭৩৭কে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এলো এয়ারবাসের এ৩২০

বোয়িং ৭৩৭কে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এলো এয়ারবাসের এ৩২০

Discussion about this post

সর্বশেষ সংবাদ

শীতের আগমনে পর্যটকে মুখর কক্সবাজার

শীতের আগমনে পর্যটকে মুখর কক্সবাজার

আর্টিমিয়া-লবণের সমন্বিত চাষে চবির সাফল্য

বিশ্ববাজারে ফের  বাড়ল স্বর্ণের দাম

ভরিতে বাড়ল ৫,২৪৮ টাকা

ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ নীতিমালা অনুমোদন

ভোমরা দিয়ে তিন মাসে এলো ২৪১ কোটি টাকার চাল




 

আর্কাইভ অনুসন্ধান

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 ১
২৩৪৫৬৭৮
৯১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

প্রকাশক ও সম্পাদক ✍ মীর মনিরুজ্জামান

তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৪৮

একটি শেয়ার বিজ প্রাইভেট লি. প্রতিষ্ঠান

(প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রয়োজন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে)

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়

বিএসইসি ভবন (১০ তলা) ॥ ১০২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ॥ ☎ 01720123162, 01768438776

  • ♦ বাংলা টেক্সট কনভার্টার

Copyright © 2025 Daily Share Biz All right reserved. Developed by WEBSBD.NET

No Result
View All Result
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ

Copyright © 2025 Daily Share Biz All right reserved. Developed by WEBSBD.NET