প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

স্মরণীয়-বরণীয়জাতীয় অধ্যাপক এএফ সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ

উপমহাদেশের খ্যাতিমান উদারবাদী, ইতিহাসবিদ, জাতীয় অধ্যাপক এএফ সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি মুক্তচিন্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান একবার অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনটি বিশেষ গুণকে ধারণ করেছিলেন তিনি। সেগুলো হলো যুক্তিবাদ, মানবিকতা ও সহনশীলতা। এএফ সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ ১৯২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে জম্নগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণা করেন। পিএইচডি করেন লন্ডনে। ১৯৪৮ সালে জগন্নাথ কলেজের প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক, রিডার এবং পরে অধ্যাপক হন। তিনি ১৯৮৪ সালে অবসর নেয়ার আগে জাহাঙ্গীরনগর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৫৬ সালে অধ্যাপক এএফ সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ কিছুদিনের জন্য জাপানের ‘ইউনেস্কো কালচারাল ফেলো’ হিসেবে কাজ করেন। তিনি বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ করেন তিনি। এম এন রায়ের র‌্যাডিকেল হিউম্যানিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে ডক শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নের কাজ করেন। সাতচল্লিশে দেশভাগের পর তিনি আর সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসেন। অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে কথ্য ইতিহাস প্রকল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দেশের অনেক গুণী ব্যক্তির মুখ থেকে ইতিহাসের মূল্যবান উপাদানকে সংগ্রহ করেন। তার রচিত ‘সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সংস্কৃতির সংকট’, ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘বাঙালির সাধনা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’, ‘উনিশ শতকে বাংলার সমাজ-চিন্তা’ ও ‘সমাজ বিবর্তন’, ‘ইতিহাসের সন্ধানে’ উল্লেখযোগ্য। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ ও জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান অর্জন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা