বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার তাঁকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে। তারামন বিবি ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজীবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন; সে সময় যার সেক্টর কমান্ডার ছিলেন আবু তাহের বীরউত্তম (কর্নেল তাহের)। তারামন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধার উৎসাহে। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। পরে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখানো শুরু করেন। তারামন রাইফেল ও স্টেনগান চালানো শেখেন। একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারলেন পাকিস্তানি বাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার নদী-তীরবর্তী অঞ্চল মোহনগঞ্জ, তারাবর, কোদালকাটি ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে দলের হয়ে কয়েকটি সশস্ত্র যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। রাজীবপুর রণাঙ্গনে তিনি নির্ভয়ে ও দক্ষতার সঙ্গে গোয়েন্দাবৃত্তির কাজ করেন। খাড়িয়াভাঙ্গা ও ভেলামারী খাল এলাকায় পাকিস্তানি ঘাঁটির অবস্থান সম্পর্কে তার সংগৃহীত নির্ভুল তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে সফল অভিযান। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবির সাহসিকতা ও বীরত্ব পূর্ণ অবদানের জন্য তাকে ‘বীরপ্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু এরপর ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে তার সন্ধান পান। ১৯৯৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে তুলে দেয়া হয় ‘বীরপ্রতীক’ সম্মাননা। তারামন বিবি বীরপ্রতীক ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজীবপুর উপজেলায় সমাধিস্থ করা হয়।
-কাজী সালমা সুলতানা