প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

স্মরণীয়-বরণীয়

ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছেন, তাদের অন্যতম বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। তিনি ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। গ্রামের বিদ্যালয়ে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি, পরে তমলুকের ‘হ্যামিল্টন’ স্কুল ও মেদিনীপুরের ‘কলেজিয়েট’ স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা লাভ করেন।

১৯০২ ও ১৯০৩ সালে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতার মেদেনীপুর ভ্রমণ করেন। সেখানে তারা ব্রিটিশ শাসনবিরোধী বক্তব্য দেন। কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম তখন তাদের বিপ্লবী আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি গোপন সংগঠন অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসনবিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধে আটক হন। ১৯০৫ সালে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে একটি গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি শরীরচর্চার সঙ্গে সঙ্গে নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা এবং সেইসঙ্গে অস্ত্র চালনা শেখেন। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলির জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো এবং ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণেবোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯০৬ সালে ব্রিটিশবিরোধী ইস্তেহার বণ্টনকালে ক্ষুদিরাম প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়েও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ক্ষুদিরাম বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে ক্রমাগতভাবে একাধিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় ইংরেজ শাসক বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের ওপর কঠোর সাজা ও দমননীতি প্রয়োগ করে আসছিল। সে কারণে যুগান্তর বিপ্লবী দল কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই হত্যা কার্যকর করার দায়িত্ব পড়ে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসুর ওপর। ১৯১৮ সালের ৩০ এপ্রিল এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা ভুল করে কিংসফোর্ডের গাড়ির মতো অন্য একটি গাড়িতে বোমা মারলে গাড়ির ভেতরে একজন ইংরেজ মহিলা ও তার মেয়ে মারা যান।  তিনি বোমা নিক্ষেপের সব দায়িত্ব নিজের ওপর নিয়ে নেন, কিন্তু অপর কোনো সহযোগীর পরিচয় দিতে বা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হননি। বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। ১৯০৮ সালের  ১১ আগস্ট মুজফ্ফরপুর কারাগারে ফাঁসিতে মাত্র ১৯ বছর বয়সের ক্ষুদিরামের মৃত্যু কার্যকর করা হয়।

-কাজী সালমা সুলতানা