প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

স্মরণীয়-বরণীয়

উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও আইনজীবী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালির যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উম্মেষ ঘটে, তার নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার প্রচেষ্টায় ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয়। তিনি ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ বলে আখ্যায়িত।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। পরিবারের সবাই উর্দু ভাষা ব্যবহার করলেও  সোহরাওয়ার্দী নিজের উদ্যোগে বাংলা ভাষা শেখেন এবং বাংলার চর্চা করেন। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় তার শিক্ষা জীবনের শুরু। পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (সম্মান) ও বিসিএল ডিগ্রি লাভ এবং লন্ডনের গ্রে’স ইন থেকে ব্যারিস্টার অ্যাট ল সম্পন্ন করেন।

১৯২০ সালে ভারতে ফিরে এসে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি যোগ দেন চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে। ১৯২৩ সালে বেঙ্গল প্যাক্ট স্বাক্ষরে তার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। কলকাতায় রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করে তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে নাবিক, রেল-কর্মচারী, পাটকল ও সুতাকল কর্মচারী, রিকশাচালক, গাড়িচালক প্রভৃতি মেহনতি মানুষের প্রায় ৩৬টি ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন গড়ে তোলেন। সোহরাওয়ার্দী ১৯২০ সালে কলকাতা খেলাফত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি ১৯২৬ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি, ১৯৩৭ সালে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি গঠন করে নিজে দলের সম্পাদক হন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিজয়ে তিনিই মূল ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানে না এসে কলকাতায় দাঙ্গাবিরোধী শান্তি মিশনে নিয়োজিত হন।

তিনি ১৯২৪ সালে কলকাতা করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র, ১৯৩৭ সালে ফজলুল হক কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার শ্রম ও বাণিজ্যমন্ত্রী, ১৯৪৩-৪৫ সালে খাজা নাজিমউদ্দীন মন্ত্রিসভায় বেসামরিক সরবরাহমন্ত্রী, ১৯৪৬-৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪-৫৫ সালে মোহাম্মদ আলীর মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৩ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি দেশের বাইরে যান। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থানকালে ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

        কাজী সালমা সুলতানা