প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

স্মরণীয়-বরণীয়

অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৬তম জন্ম বার্ষিকী আজ। তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সর্বাধিনায়ক ছিলেন। ‘নেতাজি’ নামে তিনি সমধিক পরিচিত। তার বিখ্যাত উক্তি ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।’

সুভাষ চন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি বর্তমান উড়িষ্যা রাজ্যের কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা করেন কটকের র‌্যাভেনশা কলেজিয়েট স্কুলে। ১৯১৮ সালে স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে তিনি সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৯ সালে উচ্চ শিক্ষার্থে তিনি ইংল্যান্ড যান। ১৯২১ সালে আইসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ হয়ে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু বিপ্লব-সচেতন সুভাষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে চাকরি ছেড়ে দেন।

দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে ভারতের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত দেখা দেয়ায় কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন।

 সুভাষ চন্দ্র মনে করতেন, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস এবং সত্যাগ্রহ নীতি ভারতের স্বাধীনতা আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। তিনি তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের কারণে তিনি মোট ১১ বার গ্রেপ্তার হন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে তিনি ভারত ত্যাগ করেন। প্রায় শতাধিক গোয়েন্দাকে ফাঁকি দিয়ে তিনি দুর্গম পথ পার হয়ে কাবুলে যান। সেখান থেকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানি যান। জার্মানির হাতে বন্দি ভারতীয় ব্রিটিশ সৈন্যদের নিয়ে গড়ে তোলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। এ সময়ে হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে সুভাষ চিন্তায় পড়ে যান। পরে জার্মানির সহায়তায় একটানা ৯০ দিন সাবমেরিনে সফর করে সিঙ্গাপুর পৌঁছান। এখানে এসে আরেক ভারতীয় স্বাধীনতার নেতা রাসবিহারী বসুর গড়া ভারতীয় জাতীয় লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময়ে তিনি জাপানিদের সহযোগিতায় আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন। এই বাহিনী নিয়ে তিনি মিয়ানমার হয়ে ইম্ফাল পর্যন্ত পৌঁছে যান। হঠাৎ করে জাপান আত্মসমর্পণ করলে তিনি সৈন্যদের নিয়ে সিঙ্গাপুর ফিরে যান। সেখান থেকে সুভাষ বসুর রহস্যজনক তিরোধান ঘটে।

১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর কথা বলা হলেও তা আজও প্রমাণিত সত্য বলে বিবেচিত হয়নি।

কাজী সালমা সুলতানা