কবি, গবেষক, পুঁথি ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক সাহিত্যরত্ন মুনশি আশরাফ হোসেনের মৃতুদিবস আজ। বাংলা প্রাচীন সাহিত্য সংগ্রহ ও সম্পাদনায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মুনশি আশরাফ হোসেন ১২টি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। লোকসাহিত্য বিষয়ে তিনি ৩০টি গ্রন্থ সম্পাদনা ও ১৭টি পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করেন। মুনশি আশরাফ হোসেন ১৮৯২ সালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় স্থানীয় মক্তবে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। সেখানকার কওমি মাদরাসায় তিনি পাঁচ বছর শিক্ষালাভ করে তিনি ‘মুনশি’ উপাধি লাভ করেন। পরে কালীপ্রসাদ মধ্য ইংরেজি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেন। এর তিন বছর পর ১৯১৮ সালে তিনি নিজে একটি প্রাথমিক স্কুল স্থাপন করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯২২ সালে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। একই বছর শিলচর নর্মাল স্কুল থেকে গুরু ট্রেনিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মুনশি আশরাফ হোসেন ১৯১৮ সালের দিকে সাহিত্য জীবন শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি বিভিন্ন সাময়িকী ও পত্রপত্রিকায় স্থানীয় সমস্যা নিয়ে লেখালেখি করেন। এরপর লোকসাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে আগ্রহী হয়ে। তার সংগৃহীত ‘মণিপুরের লড়াই’ দীনেশচন্দ্র সেন তার পূর্ববঙ্গ গীতিকা গ্রন্থে’ অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ১২টি মৌলিক গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এর মধ্যে আশরাফ দেওয়ানা, ভূমিকম্পের কবিতা, আদম খাঁ দেওয়ানের গীত ইত্যাদি। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে দিলকুশ কন্যার বারমাসী, শান্তিকন্যার বারমাসী, লিলাইর বারমাসী, মধুমালার গীত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার রচিত পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে মক্তবি বাল্যশিক্ষা, সাহিত্য সুধা, নববিধান ধারাপাত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মুনশি আশরাফ হোসেন রচিত ‘সিলহটের ইতিহাস’ প্রাচীন মাসিক আল ইসলাহ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৩৫ সালে মুনশি আশরাফ হোসেন মুর্শিদাবাদ বঙ্গসাহিত্য মণ্ডল কর্তৃক পুরাতত্ত্ববিদ উপাধি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে নিখিল বঙ্গ সাহিত্য সংঘ কর্তৃক তিনি সাহিত্যরতœ ও কাব্যবিনোদ উপাধি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তদানীন্তন পাকিস্তন সরকার কর্তৃক তমঘা-ই-আজম উপাধি লাভ করেন। তিনি আসাম সরকার কর্তৃক সাহিত্য বৃত্তি (১৯৪৩) ও বাংলা একাডেমি আর্থিক সাহায্যও লাভ করেন। ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুয়ারি নিজ গ্রাম রহিমপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা