বাঙালি নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯তম জš§বার্ষিকী আজ। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘মধুকবি’ নামে পরিচিত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায় তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। সাত বছর বয়সে তিনি কলকাতা যান এবং খিদিরপুর স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজে অধ্যয়নকালেই মধুসূদনের কাব্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৮৩৪ সালে কলেজের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি ইংরেজি ‘নাট্য-বিষয়ক প্রস্তাব’ আবৃত্তি করে প্রশংসিত হন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। তখন থেকেই তিনি বিলাত যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। তার ধারণা ছিল বিলাতে যেতে পারলেই বড় কবি হয়ে যাবেন। সেজস্য তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং মাইকেল মধুসূদন দত্ত নাম ধারণ করেন। মধুসুদন ইংল্যান্ডে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতে গিয়ে সেখানকার আবহাওয়া ও বর্ণবাদিতার কারণে বেশি দিন থাকেননি। ১৮৬০ সালে তিনি ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে চলে যান। এ সময় তিনি রচনা করেন বঙ্গভাষা, কপোতাক্ষ নদ প্রভৃতি সনেটে। তার এই সনেটগুলো ১৮৬৬ সালে চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলি নামে প্রকাশিত হয়। ১৮৪৮ সালে তিনি মাদ্রাজ চলে এসে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। মাদ্রাজে থাকা অবস্থায় তিনি রচনা করেন ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’। ১৮৬৫ সালে তিনি আবার ইংল্যান্ড যান। এ সময় তিনি আর্থিকভাবে দৈন্য দশায় পড়েন। সেসময় তার প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তার সহযোগিতায় মধুসূদন আইন পড়া শেষ করে ভারতে আসতে সক্ষম হন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত নাট্যকার হিসেবে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে পদার্পণ করেন। ‘শর্মিষ্ঠা’, ‘কৃষ্ণকুমারী’ (নাটক), ‘পদ্মাবতী’ (নাটক), ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, ‘তিলোত্তমাসম্ভব’, ‘বীরাঙ্গনা’, ‘ব্রজাঙ্গনা’, ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’, ‘হেকটর বধ’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন বহু ভাষাবিদ। মাতৃভাষা ছাড়া তিনি আরও ১২টি ভাষা জানতেন। মহাকবি, নাট্যকার, বাংলা কাব্যে সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক তিনি। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্য। ইংরেজি ভাষায় তিনি পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। মায়াকানন (১৮৭৩) তার রচিত সর্বশেষ নাটক। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা