প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

স্মরণীয়-বরণীয়

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীরের ২৪১তম জন্মদিন আজ। তিতুমীর শুধু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি, বাংলার অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করে, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলার হায়দারপুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তিনি বাড়িতেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষা সাহিত্যের প্রতি তার গভীর অনুরাগ দেখা যায়। পাশাপাশি ইসলামি ধর্মশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র, দর্শন, ইত্যাদি বিষয়ে তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিনি দক্ষ কুস্তিগীর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮২৭ সালে তিতুমীর  জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। অন্য জমিদারদের সঙ্গে তিনি সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এ সময়ে তিতুমীর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের কাছে জমিদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি বারাসতের নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশ এবং কাদা দিয়ে দ্বি-স্তরবিশিষ্ট বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। এরপর তিনি চব্বিশপরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। জমিদার ও ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজিত হয়। বারাসতের বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষক তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন। তিনি চবিবশ পরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলায় স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।  ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের ঘিরে ফেললে তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়। ঘোষণায় তিনি বলেন, একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইয়ে হারজিত আছেই, এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহীদ হওয়ার মর্যাদা অনেক। এই লড়াই শেষ লড়াই নয়। আমাদের লড়াইয়ের প্রেরণায় এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে। আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।’ ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর ইংরেজ বাহিনী মুজাহিদদের ওপর আক্রমণ চালায়। তারা  স্থানীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে বাঁশের কেল্লায় আশ্রয় নেয়। ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে ১৯ নভেম্বর বহু অনুসারীসহ তিতুমীর শাহাদত বরণ করেন।

 কাজী সালমা সুলতানা