বাঙালি কবি, লেখক ও ঔপন্যাসিক মৈত্রেয়ী দেবীর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তার রচিত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘ন হন্যতে’ তাকে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্য ছাড়াও সমাজসেবায় তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন। মৈত্রেয়ী দেবী ১৯১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে বরিশাল জেলার আগৈলঝারার গৈলা গ্রামে। ১৯৩৬ সালে তিনি দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উদিত ভূমিকা’ লেখেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘চিত্তছায়া’। মংপুতে থাকাকালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে মৈত্রেয়ী দেবী সেখানে উপস্থিত হন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মংপুতে কাটানো দিনগুলোর স্মৃতি ও তার সঙ্গে আলাপচারিতা নিয়ে ১৯৪২ সালে তিনি লেখেন স্মৃতিকথা ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’। রবীন্দ্র-বিষয়ক তার অন্য বইগুলো হলো স্বর্গের কাছাকাছি, কবি সার্বভৌম, রবীন্দ্রনাথ গৃহে ও বিশ্বে, রবীন্দ্রনাথ: দি ম্যান বিহাইন্ড হিজ পোয়েট্রি। মৈত্রেয়ী দেবী তার আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘ন হন্যতে’ তার দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনবোধ, ইংরেজ শাসনামলে ভারতের সমাজব্যবস্থা এবং জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেন। এই বইটির জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। বইটি ইংরেজি ভাষায় ‘ইট ডাজ নট ডাই’ নামে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালে তিনি পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি দুটি কাব্যগ্রন্থ, একটি উপন্যাস, পাঁচটি গল্পগ্রন্থ ও সাতটি রবীন্দ্রবিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্য রচনা ছাড়াও তিনি সমাজসেবায় অনন্য অবদান রাখেন।
মৈত্রেয়ী দেবী ১৯৭১ সালে ‘নবজাতক’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেন এবং বাংলাদেশের জন্য ভারতকে যুদ্ধ করা উচিত বলে প্রবন্ধ লেখেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে বত্তৃতা দেন। এ সময় তিনি শরণার্থী শিবিরের অনাথ শিশুদের জন্য ‘খেলাঘর’ নামে একটি সেবামূলক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই সংস্থার দেখাশোনা করেন। ১৯৯০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা