প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

স্মরণীয়-বরণীয়

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মী আশালতা সেনের ১২৯তম জন্মদিন আজ। তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন, লবণ আইন অমান্য আন্দোলন, ভারত ছাড় আন্দোলন এবং সর্বোপরি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা রাখেন।

আশালতা সেন ১৮৯৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীতে জš§গ্রহণ করেন। আশালতার মাতামহী নবশশী দেবী ছিলেন স্বদেশি আন্দোলনের কর্মী। তারই প্রেরণা ও তত্ত্বাবধানে তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। এ সময় নবশশী দেবী বিলাতি কাপড় বর্জনের সংকল্পপত্রে দৌহিত্রী আশালতাকে শপথ স্বাক্ষর করিয়ে স্বদেশি ব্রত দীক্ষায় দীক্ষিত করেন। ১১ বছর বয়সে আশালতা গ্রাম্য নারীদের স্বাক্ষর সংগ্রহকাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এভাবেই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন।

১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিসি মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঢাকার গেণ্ডারিয়ার নিজ বাসভবনে মহিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এসব আন্দোলন পরিচালনাকালে কয়েকবার তাকে আটক ও কারাভোগও করতে হয়।

১৯৩৩ সালে আশালতা সেন ঢাকা জেলার কংগ্রেসের সহসভাপতি মনোনীত হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে তিনি ত্রাণ তৎপরতায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থা পরিষদ এবং ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন।

নারীদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ‘জাগ্রত সেবিকাদল’, ‘রাষ্ট্রীয় মহিলা সংঘ’, ‘নারীকর্মী শিক্ষা কেন্দ্র’ এবং কংগ্রেস মহিলা সংঘ নামে সংগঠন তৈরি করেন। এসব বক্তৃতার মাধ্যমে  এ অঞ্চলের অনুন্নত সম্প্রদায়ের লোকদের আত্মোন্নয়নের জন্য গণচেতনা জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। গেণ্ডারিয়ার জুরাইনে ১৯২৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘জুরাইন শিক্ষা মন্দির’।

ছোটবেলা থেকেই তিনি সাহিত্যের প্রতি উৎসাহী ছিলেন। তিনি রচনা করেন রচনা উচ্ছ্বাস, উৎস, বিদ্যুৎ ও ছোটদের ছড়া। এছাড়া আত্মজীবনীও রচনা করেন। আশালতা সেনের বাড়িটি বর্তমানে গেণ্ডারিয়া ‘মনিজা রহমান বালিকা বিদ্যালয়’ নামে পরিচিত।

একাত্তরে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আশালতা সেন এ দেশের জনগণকে নানাভাবে সাহায্য করেন এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে গান রচনা করেন। স্বাধীনতার পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আমন্ত্রণে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। ১৯৮৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা