খ্যাতিমান বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৭৬ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে আসেন। এ সময় অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের কাহিনিকে নিয়ে তিনি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। চলচ্চিত্রটি ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা দর্শক, চলচ্চিত্র সমালোচকদের ভোটে বাংলাদেশের সেরা সিনেমার মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে। ঋত্বিক কুমার ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার জিন্দাবাজারের ঋষিকেশ দাস লেনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের পর তিনি মা-বাবার সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। সেখানেই তার প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ফিরে আসেন রাজশাহীতে। ১৯৪৬ সালে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৮ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পরীক্ষা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন তিনি।
১৯৪৭-এর পরপর দেশভাগের সময় ঋত্বিকের সাহিত্যচর্চার শুরু। ১৯৪৮ সালে তিনি তার প্রথম নাটক ‘কালো সায়র’ রচনা করেন। একই বছর ‘নবান্ন’ নামক পুনর্জাগরণমূলক নাটকে তিনি অংশ নেন। ১৯৫১ সালে তিনি নিমাই ঘোষের ‘ছিন্নমূল’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে তার যাত্রা শুরু হয়। তিনি একই সঙ্গে অভিনয় এবং সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তার বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার এবং সুবর্ণরেখা অন্যতম। এই তিনটি চলচ্চিত্রকে ট্রিলজি বা ত্রয়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’ ও ‘অযান্ত্রিক’, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘ফিয়ার’, ‘আমার লেনিন’, ‘দুর্বার গতি পদ্মা’ ও ‘যুক্তি তক্কো’ আর ‘গপ্পো’ অন্যতম। ১৯৬৫ সালে স্বল্প সময়ের জন্য তিান পুনেতে বসবাস করেন। এ সময় তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন। ঋত্বিক কুমার ঘটক কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের সর্বকালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রকার। আটটি চলচ্চিত্র, ১০টির মতো তথ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যের চিত্রও নির্মাণ করেন তিনি।
কাজী সালমা সুলতানা