প্রখ্যাত কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ৮৯তম জন্মদিন আজ। তার রচিত ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ এবং ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ কবিতা দুটি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অভূতপূর্ব সংযোজন।
আজ আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ১৯৩৪ সালের ৮ জানুয়ারি বরিশাল জেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন।
১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে যোগদান করেন সিভিল সার্ভিসে।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব, বাংলাদেশ সরকারের কৃষি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া উইনরক ফাউন্ডেশনের সদস্য; হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ও জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর আরেকটি পরিচয় তিনি বাংলাদেশের একজন মৌলিক কবি। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তার কবিতার সূচনা হয় এবং বিকাশ ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সামগ্রিক জনজীবনের আশা-নিরাশা এবং স্বপ্ন-বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে।
তার কাব্যরীতিতে মূলত দুটি প্রবণতাকে দেখা যায়: একটি গীতিমুখ্য কাব্যরীতি আর অন্যটি মহাকাব্যিক। পঞ্চাশের দশকে রচিত তার প্রথম গীতিমুখ্য কাব্যরীতিমূলক কাব্যগ্রন্থ ‘সাত নরী হার’ এবং পরবর্তীকালের ‘কখনো রং কখনো সুর’ ও ‘কমলের চোখ’।
আশির দশকে তিনি রচনা করেন তার সর্বাধিক জননন্দিত কাব্যগ্রন্থ ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ (১৯৮১), ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’সহ আরও কয়েকটি গ্রন্থ। তার রচিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থÑ ‘আমার সময়’, ‘সহিষ্ণু প্রতীক্ষা’, ‘আমার সকল কথা’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ এবং সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘মসৃণ কৃষ্ণগোলাপ’ উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা করেন। আশির দশকে তিনি ‘পদাবলি’ নামে কবিদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। কাব্য রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ১৯৭৯ সালে একুশে পদক ও ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০০১ সালের ১৯ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা