শহীদ ব্যক্তিত্ব সার্জেন্ট জহুরুল হকের ৮৮তম জন্মদিন আজ। তিনি আগরতলা মামলার অভিযুক্ত হিসেবে বন্দি ও পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নিহত হন। তার রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তান সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। মামলার প্রধান অভিযুক্ত শেখ মুজিবসহ সব অভিযুক্ত মুক্তি পান।
সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৯৩৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৬ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। বিমানবাহিনীতে তিনি ‘সার্জেন্ট’ পদে উন্নীত হন।
বাঙালিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে দমাতে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা মামলা দায়ের করে। মামলার ১ নম্বর আসামি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান ও জহুরুল হককে ১৭ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পাকিস্তান সরকার মামলাটির নাম দেয় ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার।’
এই মামলায় পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি দুজন সিএসপি অফিসারসহ ২৮ জন বাঙালিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই অভিযোগে ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানও গ্রেপ্তার হন। প্রথমে তাদের ‘দেশরক্ষা আইন’ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ‘আর্মি, নেভি অ্যান্ড এয়ারফোর্স অ্যাক্টে’ সার্জেন্ট জহুরুল হকসহ অন্যান্য আসামিকে পুনরায় গ্রেপ্তার করে সেন্ট্রাল জেল থেকে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে বন্দি থাকাকালে তাকে পাকিস্তানি সৈনিকের হাতে থাকা রাইফেলের গুলিতে বিদ্ধ হন ও মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে ঊনসত্তরের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।
ফলে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় এবং শেখ মুজিবসহ সব বন্দিরা নিঃশর্ত মুক্তি পায়। এই গণআন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে নয়, মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান।
কাজী সালমা সুলতানা