কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফরের ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ। তার পুরো নাম সৈয়দ আল্ হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখ্ত সিকান্দার। তিনি ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ বর্তমান সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা, ১৯৩৮ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি কলকাতার মিলিটারি অ্যাকাউন্টস বিভাগে যোগ দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি সিভিল সাপ্লাই অফিসেও চাকরি করেন। সিকান্দার আবু জাফর ১৯৪১ সালে কাজী নজরুল ইসলামের নবযুগ পত্রিকায় যোগদান করেন। তিনি ইত্তেফাক, সংবাদ ও দৈনিক মিল্লাত পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি ১৯৫৭ থেকে ১৩ বছর মাসিক সমকালের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘সমকাল মুদ্রায়ণ’ নামে একটি ছাপাখানা ও ‘সমকাল প্রকাশনী’ নামে একটি প্রকাশনালয় স্থাপন করেন। দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে তিনি রেডিও পাকিস্তানের শিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন। ষাটের দশকে পূর্ববাংলা তথা আজকের বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, আবু জাফর ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাসম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন। জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই, হতমানে অপমানে নয়, সুখ সম্মানে বাঁচবার অধিকার কাড়তে দাস্যের নির্মোক ছাড়তে অগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ চলবেই চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই। তার রচিত এই গান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিকামী জনতাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। আবু জাফর সাহিত্যের সব শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে কবি হিসাবে সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে উপন্যাস পূরবী, নতুন সকাল; ছোটগল্প মাটি আর অশ্রু; কবিতা প্রসন্ন শহর, তিমিরান্তিক, বাংলা ছাড়ো, নাটক সিরাজ-উদ-দৌলা, মহাকবি আলাওল; সংগীত মালব কৌশিক। তিনি ১৯৬৬ সালে নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৮৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা