বীর যোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও গুপ্তচর কাঁকন বিবির পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি মুক্তিবেটি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ৫নং সেক্টরের গুপ্তচরের কাজ করেন। কাঁকন বিবির বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে। তিনি খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তার আসল নাম কাঁকাত হেনিনচিতা। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের উত্তাল মুহূর্তে তার স্বামী সিলেটের আখালিয়া ক্যাম্প থেকে নিরুদ্দেশ হন। কাঁকন বিবি জনৈক শহীদ আলীর আশ্রয়ে শিশুকন্যাকে রেখে দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা ক্যাম্পে স্বামীকে খুঁজতে যান। স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে তিনি অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। পরেই স্বামীকে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে তিনি প্রতিশোধের নেশায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার শপথ নেন। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের দেখা করিয়ে দেন। কাঁকন বিবির ওপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করার। তিনি অসীম সাহসিকতার সঙ্গে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তার সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক সফল আক্রমণ চালান।
গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েও তিনি পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে আবারও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। এবার পাকিস্তানি সেনারা অজ্ঞান কাঁকন বিবিকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। জ্ঞান ফিরলে তাকে উদ্ধার করে বালাট সাবসেক্টরে নিয়ে আসা হয়। এবার সুস্থ হয়ে তিনি অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীকালে তিনি সম্মুখ যুদ্ধ আর গুপ্তচরবৃত্তি উভয় কাজই শুরু করেন। তিনি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলায় পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। এই যুদ্ধে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। দেশ স্বাধীন হলে কাঁকন বিবি দোয়ারাবাজার উপজেলার লীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে এক ব্যক্তির কাছে তিনি মেয়েসহ আশ্রয় নেন। এর পর প্রায় দুই যুগ তিনি অন্তরালে কাটান। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সাংবাদিক তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করলে বিষয়টি সবার গোচরে আসে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে তিনি বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। ২০১৮ সালের ২১ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Ñকাজী সালমা সুলতানা