চলতি বছর হজের ‘উচ্চ’ ব্যয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। অতিরিক্ত খরচের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে হজে যাওয়ার সাহসই করছেন না। হজ করতে প্রাক-নিবন্ধন সংখ্যা এতই কম যে, বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখনও হজের নির্দিষ্ট কোটা পূরণ না হওয়ায় নিবন্ধন সময় চতুর্থ দফা বাড়িয়ে ২১ মার্চ করেছে সরকার; যদিও ঘোষণা দেয়া হচ্ছেÑ আর সময় বাড়ানো হবে না। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার ১৫৬ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন।
ব্যয় কমাতে অনেকে উড়োজাহাজ ভাড়া এবং প্যাকেজ মূল্য কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এই দাবিতে শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেছে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজš§ পরিষদ। সংগঠনটি বলছে, উড়োজাহাজ ভাড়া কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ট্যাক্স কমিয়ে আনলে হজ প্যাকেজ মূল্য সাড়ে চার লাখ টাকা করা সম্ভব।
হজ ইসলামের পাঁচটি অত্যাবশ্যকীয় বিধানের একটি। হজের মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। মানুষের মনের দুষ্ট প্রবৃত্তি অবদমিত হয়। জীবনাচরণে পরমিতিবোধ আসে। হজ কেবল ধর্মীয় দিক থেকে নয়, উন্নত নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও সৌহার্দ্য সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে।
পার্থিব জীবন সুন্দর করার ক্ষেত্রে হজের ভূমিকা অনন্য। হজের মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। হজ পালনের সময় মানুষের মধ্যে দূরত্ব ব্যবধান কমে। হজ শেষে একজন মুসলিম আল্লাহপ্রেম, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। তারা অন্যায়-অপরাধ থেকে মুক্ত হয়ে শুদ্ধ-সুন্দর জীবন যাপনের প্রয়াস চালান। যথানিয়মে ধর্মকর্ম পালনে নাগরিকদের সহায়তা করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের অংশ। সরকার এবার যে হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে; তাতে দেখা যাচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায় প্যাকেজপ্রতি খরচের পরিমাণ বেড়েছে এক লাখ টাকারও বেশি। কিন্তু কভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতেই বিপাকে আছে। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ পাশের দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে হজের খরচ বেশি। অথচ আয়ের উৎস দুর্বল হয়ে গেছে আমাদের।
আগে অনেকে একাধিকবারও হজ করেছেন। এখন একবার হজ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ হজের নির্ধারিত কোনো খরচ নেই। সৌদি সরকারের নির্দিষ্ট কিছু ফি ছাড়া বিভিন্ন দেশ বিমান ভাড়াসহ হজের ব্যয় নির্ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশে একসময় হজের খরচ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও দুই বছর ধরে তা বাড়ছে। বিশেষ করে চলতি বছরের জন্য সরকার রেকর্ড ব্যয়ে হজের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজš§ পরিষদ বলছে, উড়োজাহাজ ভাড়া এবং অন্য ট্যাক্স কমিয়ে আনলে হজের খরচ কমানো সম্ভব। সরকারের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে বাড়তি খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা এবং উড়োজাহাজ ভাড়াসহ যেসব জায়গায় খরচ কমানোর সুযোগ আছে, সেগুলো কমিয়ে হজকে যথাসম্ভব সাশ্রয়ী করে তোলা।