অনেকেই শেষ রাতে অথবা সকালে বিছানা ছাড়তে গিয়ে হঠাৎ পায়ের পেশিতে টান অনুভব করেন। মুহূর্তেই তীব্র ব্যথা বোধ করেন। বেশ কিছুক্ষণ পা নড়াচড়া করা যায় না, এমনকি পায়ে ম্যাসাজ করেও কাজ হয় না। এ রকম অবস্থা বা লেগ ক্র্যাম্পস কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক ঘণ্টাও থাকতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘নকটার্নাল লেগ ক্র্যাম্পস’।
সাধারণত পায়ের গোছা, হাঁটুর নিচের পেশি বা ঊরুর পেশিতে এমন টান লাগে। অনেকের কয়েক দিন পর্যন্ত যন্ত্রণা থাকে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ও চিকিৎসা জানা থাকলে নিজেই এর ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
অনেকে অবশ্য নকটার্নাল লেগ ক্র্যাম্পসের সঙ্গে ‘রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম’কে গুলিয়ে ফেলেন। দুটোই রাতে ঘুমের মধ্যে হতে পারে। তবে দুটো আলাদা। রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বা আরএলএস বলতে আমরা সাধারণত পায়ে ঝিঁঝি ধরা বলি। আর লেগ ক্র্যাম্পসে পায়ের পেশিতে টান ধরে।
কারণ: অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকার পর হঠাৎ উঠতে গিয়ে পায়ের পেশিতে বেশি সময় ধরে অতিরিক্ত চাপ পড়লে বা কংক্রিটের ঠাণ্ডা মেঝেতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে লেগ ক্র্যাম্পস হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবে আমরা যেভাবে বসি, সেভাবে না বসে অন্যভাবে বসার কারণেও এমনটা হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায়, অতিরিক্ত মাদকাসক্তি, ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা), পারকিনসনস ডিজিজ, নিউরোমাসকুলার ডিসঅর্ডার, সমতল পায়ের পাতা বা এমন শারীরিক গঠনগত ত্রুটি, ডায়াবেটিস প্রভৃতি কারণে এটি হতে পারে। ডাইইউরেটিক্স, স্ট্যাটিন বা বিটা অ্যাগোনিস্ট-জাতীয় ওষুধের কারণেও লেগ ক্র্যাম্পস হয়।
যা করবেন: লেগ ক্র্যাম্পস হলে ধীরে ধীরে উঠে বসুন। সম্ভব হলে অল্প হাঁটার চেষ্টা করুন। হালকা করে পা ঝাঁকিয়ে দেখতে পারেন। ঢিলেঢালা সুতির কাপড় পরুন। টান লাগার বা খিঁচ ধরার স্থানে গরম কাপড় দিয়ে সেঁক দেন। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসা: পানিশূন্যতা যাতে না হয়, সেজন্য পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। বিশেষ করে যাদের খুব বেশি ঘাম হয়, তাদের একটু বেশিই পানি খেতে হবে। চেস্টনাট খেতে পারেন, এতে পায়ে রক্তসঞ্চালন বাড়বে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্ট্রেচিং করে নিন, অর্থাৎ হাত-পা ছুড়ে শরীর টান-টান করে তারপর ঘুমাতে যান। হাইহিল বা উঁচু জুতা পরে দীর্ঘ সময় থাকবেন না, বিশেষ করে যাদের পায়ের তলা সমতল।
মো. নেছার উদ্দিন
ফিজিওজোন, ফিজিওথেরাপি সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা