প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

হুন্ডি বন্ধের উপায় কী?

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব : বৈধ-অবৈধ আয় করে সেটা বিদেশে পাচার করে ভোগের মাধ্যম হুন্ডি। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা, এমপি-মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, আমলা-সচিব হুন্ডির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। উচ্চশিক্ষায় বিদেশগামী শিক্ষার্থী, চিকিৎসায় বিদেশগামী, শপিং ও ভ্রমণে যাওয়া, এমনকি হজে যাওয়া যাত্রীদের হুন্ডি। কিছু পক্ষ জেনে অর্থ পাচার করেন, অন্যরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের বাধায় পড়ে দরকারকে হুন্ডি করেন। প্রবাসী শ্রমিক ভাই-বোন, বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি), ফ্রিল্যান্সার এবং ব্যবসায়ীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধভাবে এবং হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশে টাকা নিয়ে আসেন। মোটা দাগে প্রবাসী ও চাকরিজীবিরা বিদেশি মুদ্রা দেশে আনেন, রাজনৈতিক নেতা এমপি-মন্ত্রী ও আমলারা বিদেশি মুদ্রা পাচার করেন আর ব্যবসায়ীরা দুটিই করেন।

হুন্ডি ছোট সমস্যা, বড় সমস্যা ‘পাচার’। ‘ডলার ড্রেইন’ বন্ধ করতে হলে পাচার থামাতে হবে। পাচারের একটা বড় অংশের সঙ্গে অবৈধ আয় করা, চাঁদাবাজি-তদবিরে কামাই করা রাজনৈতিক নেতা, ঘুষ খাওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা-আমলারা জড়িত। পাশাপাশি রপ্তানি মূল্য কম দেখিয়ে ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ এবং আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার, মোট পাচারের একটা বড় অংশ। যেহেতু পাচার বহুলাংশে ‘ক্ষমতা ও প্রভাব’ প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত, তাই পাচার ও হুন্ডি থামাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। হুন্ডি দেশে ও দেশের বাইরে মুদ্রা আনা-নেয়ার দ্বিমুখী চক্র। এতে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা যেমন পাচার হয়, তেমনি আসেও। হুন্ডি ঠেকাতে গেলে আগে হুন্ডি কেন হয় সেটা বুঝা জরুরি।

ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে ডলার আনলে বা ডলার এনে ঘোষণা দিলে সেটা বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে জমা হয়। অর্থব্যবস্থায় নতুন টাকা তৈরি হয় অর্থাৎ সম্পূর্ণ নতুন অর্থ বা সম্পদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিদেশি মুদ্রা এনে ঘোষণাহীন রাখলে কিংবা হুন্ডি চ্যানেলে অর্থ আনলে সেটা রিজার্ভে জমা হয় না। ফলে নতুন সম্পদও তৈরি হয়, তবে মানুষের অর্থের প্রয়োজন মিটে। সরকারি নজরদারি, ব্যাংকে ঘুষ ও হয়রানি, ব্যাংক ফি, অগ্রিম আয়কর, ব্যাংকের নি¤œ মুদ্রা বিনিময় হার এবং বিভিন্ন পেপার ওয়ার্কের বহু ঝামেলা ও আর্থিক লোকসান ইত্যাদি এড়াতে লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশ হুন্ডিতে সম্পন্ন হয়। বড় প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ কেন হুন্ডি করে? কেন বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে কিংবা বাইরে নেয়ার প্রয়োজনে ব্যাংকে যায় না।

অগ্রিম আয়করে যত ভয়!

সরকার কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়ে রপ্তানি আয় দেশে ফিরা মাত্রই অগ্রিম আয়কর বা এআইটি কেটে রাখে। ফলে রপ্তানি আয়ের একটা অংশ বিদেশে রাখতে কিংবা পরবর্তী আমদানির জন্য রপ্তানিকারক ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা না ভাঙানোর ঝোঁক দেখান ব্যবসায়ীরা। বর্তমান এআইটি পদ্ধতি ভালো নাকি কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় বন্ধ করে অগ্রিম আয়কর বন্ধ করা ভালো এটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। অভিযোগ আছে, এআইটি থেকে বাঁচতে ব্যবসায়ীরা বিদেশি বায়ারের যোগসাজশে রপ্তানির এলসি মূল্যমান কম দেখিয়ে বাকিটা হুন্ডিতে সেটেল করেন।

নতুন নতুন পদক্ষেপ হুন্ডিতে উৎসাহ দেবে কি?

বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানিকারকের প্রত্যাবাসন কোটায় ইআরকিউ অ্যাকাউন্টের স্থিতি পূর্বের হারের দ্বিগুণ নগদায়নের নির্দেশ দিয়েছে। ইআরকিউ স্থিতি বর্ধিত রাখার উদ্দেশ্যই ছিল রপ্তানিকারকের নিয়মিত আমদানি ও তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর ডলার সংরক্ষণ করা, বিভিন্ন পেমেন্ট ঝামেলামুক্ত ও দ্রুত করা। রপ্তানির ডলারকে টাকায় ভাঙিয়ে পরবর্তী আমদানির জন্য ডলার কিনলে উপর্যুপরি ‘কনভার্শন লস’ হয়। পাশাপাশি ওপেন পজিশনের (এনওপি) সীমা কমিয়ে ১৫ শতাংশ করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের এলসি বা ঋনপত্র খোলার সেবা সক্ষমতাও কমবে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের ইআরকিউ ব্যালান্সের ‘মেয়াদি আমানত’ নগদ করতে বলা হয়েছে।

ব্যবসায়ীকে কাঁচামাল আমদানির জন্য জমা রাখা ডলার ভাঙাতে বাধ্য করা আদতে প্রয়োজনীয় আমদানিকেই নিরুৎসাহিত করা। বিদেশে দায়দেনা মেটানোর জমা রাখা ডলার বিক্রি করার পলিসি অপরিণামদর্শী হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে একদিকে রপ্তানি বাণিজ্য কঠিন হয়ে গেছে, এতে এলসি ভ্যালু কম দেখিয়ে হুন্ডিতে লেনদেনের সেটেলমেন্ট বাড়বে। খোলাবাজার বা হুন্ডি মার্কেটে ডলার যে ১১২ টাকার রেকর্ড করেছে তাতে পাচার ও ফরেক্স ব্যবসার পাশাপাশি এসব সিদ্ধান্তেরও প্রভাব থাকতে পারে।

ব্যাংকের নিন্ম মুদ্রা বিনিময় হার হুন্ডি বন্ধের প্রধানতম বাধা!

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অনেকগুলো রেট কার্যকর। দেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক, কার্ব মার্কেটের অর্থাৎ হুন্ডি মার্কেট ও বিদেশি ব্যাংকের রেট ভিন্ন ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দৈনিক ঘোষিত রেট থাকে কিন্তু তা মানা হয় না। প্রবাসীরা নির্ধারিত রেটে ডলার ক্রয় কিংবা বিক্রয় কোনোটাই করতে পারেন না। ব্যাংকে এলসি নিষ্পত্তির ডলার হারও বর্ধিত। একজন প্রবাসী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে বা ভাঙালে ‘ঠকেন’ বলেই তারা কার্ব মার্কেট বা হুন্ডিতে গিয়ে লাভবান হন। ব্যাংক ও হুন্ডি মার্কেটের বিনিময় হারের পার্থক্য প্রায়ই ৫ টাকার কাছাকাছি বলে, প্রবাসীদের পছন্দের মাধ্যম হুন্ডি। এমনকি সরকার ঘোষিত আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পরও হুন্ডি মার্কেটের বিনিময় হার ভালো। ফলে লাভের জন্য হুন্ডি মার্কেট সবার পছন্দ। প্রণোদনা না দিয়ে বিপরীতে টাকার মান বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া বা হুন্ডির কাছাকাছি রাখা উচিত বলে অনেকেই মনে করেন। প্রণোদনার ফলে পাচারকৃত ‘কালো টাকা’ বৈধ চ্যানেলে ‘সাদা’ হয়ে ফেরার সম্ভাবনাও বাড়ে, এতে দেশের ঘুষ-দুর্নীতি উৎসাহ পায়।

বাংলাদেশ টাকার মান ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর, টাকা অতিমূল্যায়িত বলে অভিযোগ আছে। একটা প্রমাণ হচ্ছে আরইইআর অর্থাৎ রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট। বাংলাদেশের আরইইআর (রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট), এনইইআর (নমিনাল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট) রেটের চেয়ে বেশি। সম্প্রতি আরইইআর ক্রমাগত বাড়ছে। অর্থাৎ টাকার ক্রয়ক্ষমতা বা ‘প্রাইস কম্পিটিটিভনেস’ বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ডলারের বিনিময় হারের চেয়েও দুর্বল। এটা হুন্ডি মার্কেটের উচ্চ বিনিময় হারের একরকম যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়। প্রবাসী ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রা ভাঙাতে গেলে কম বিনিময় পান বলে তিনটি সমস্যা হয়। এক. মুদ্রাটি কার্ব মার্কেটে বা হুন্ডিতে চলে যায়। দুই. বাংলাদেশের রিজার্ভ কম হয়। তিন. বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রা আয়ের উৎস সংকুচিত হয়ে বিদেশি মুদ্রা বিক্রির পথ বন্ধ হয়। উপরন্তু শুরুতে প্রবাসী আয়ের ১০ শতাংশ কেটে রাখার হয়রানি আছে।

ব্যাংকের পুলিশি আচরণ হুন্ডি বিকাশে সহায়ক!

বিদেশগামী ছাত্র, ব্যবসায়ী, রোগী কিংবা পর্যটক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে ডলার কিনতে গেলে পুলিশি আচরণসহ হয়রানির শিকার হন। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আনা মুদ্রা বিক্রি করতে গেলে রেট কম দেয়, বিভিন্ন কাগজ পত্র চায়। কিনতে গেলে কেন যাবেন, কই যাবেন, ভিসা-আমন্ত্রণ পত্র জমা দেন, এটা-সেটা আনেন, ওটা নোটারি করেন, ওমুক-তমুক ফর্ম পূরণ করেন, এই-ঐ জায়গা থেকে সত্যায়িত করেন, এত কপি ফটোকপি করেন এসব উৎপাতের পাশাপাশি আছে ডলার নাই, কাল আসেন, বসের সঙ্গে দেখা করেন, আজকে ব্যাংকিং সময় শেষ এসব হয়রানি ও ঘুষের বাহানা। একদিকে অর্থ নষ্ট, অন্যদিকে শ্রমঘণ্টা। বিপরীতে হুন্ডি এজেন্টরা ফোন দিলে বাসায় টাকা ও বিদেশি মুদ্রা নিয়ে আসে, স্যার কখন লাগবে, কী পরিমাণ লাগবে! মুদ্রা বিনিময় যে একটা বিধিবদ্ধ ব্যাংকিং সেবা হওয়া উচিত, এই বোধটা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নেই। সেবা মানের ধারণা পরের বিষয়।

হুন্ডির সেবা সহজ দ্রুত এবং নিরাপদ, অনুরূপ সেবা ব্যাংকে আনতে হবে

একটা সময় হুন্ডি ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও এখন নিরাপদ। প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বিদেশে বসে মা-বাবার হাতে টাকা পাঠানো শুধু একটা ফোনকলের ব্যাপার মাত্র। অর্থাৎ কর্মস্থল থেকেই বিদেশের দোকানে/এজেন্টকে ফোন দিয়ে পরিমাণ বলে দিলেই তারা সমপরিমাণ টাকা হয় বিকাশে পাঠিয়ে দেন, না হয় মোটরসাইকেলে করে গিয়ে গ্রামে বা শহরে একেবারে বাসায় পৌঁছে দেন।

বিপরীতে, ব্যাংকে প্রবাসী আয়ের অর্থ ভাঙাতে গেলে গোনা লাগে বহু তালবাহানা। ম্যানেজার নাই, কাল আসেন, বেলা ৩টার আগে আসতে হবে, ওমুক ব্রাঞ্চে যান, অযাচিত কচলাকচলি শুরু হয় ঘুষ খাবার জন্য। অনেক সময় বৈধ পরিচয়পত্র-এনআইডি না থাকা, পরিচয়পত্র বহনের সচেতনতাও ব্যাংকে প্রবাসী আয় উঠানোর বাধা। এনআইডি/পাসপোর্ট কপি দেয়ার পরও সি-ফর্ম একটা হয়রানি। হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর কোনো ফি নেই, বিপরীতে অনেক ব্যাংক চার্জ কাটে।

ফ্রিল্যান্সারদের টাকা দেশে আনা অনেক হ্যাপা, বিশেষ করে বড় অঙ্কের। দেশ থেকে এনডোর্স করতে ব্যাংকে হয়রানি, রেট অনেক বেশি, দেশের কার্ড বিভিন্ন জায়গায় চলেই না, ৩০০ ডলারের লেনদেন করতে গেলে ব্যাংকে আগে জবাবদিহি করতে হয়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সেবা নেই। বিদেশে প্রয়োজনে বৈধভাবে সীমিত পরিমাণ অর্থ নেয়ার সহজ সুবিধা কম। আছে আবেদন ও অনুমতির প্রশ্ন। বাংলাদেশ ব্যাংককে এসব বিষয় আমলে নিয়ে হুন্ডির সেবা ব্যাংকেই নিতে হবে।

আকামাহীন প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর বৈধ মাধ্যম তৈরি

সৌদি আরব ও দুবাইতে যারা নতুন যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশ মানুষের আকামা নেই বলে উৎসে ব্যাংকে লেনদেন করতে পারে না, তাই হুন্ডিতে টাকা পাঠায়। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে সরকারকে। দূতাবাসগুলো প্রতিটা বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিদেশি শহরের বাংলা দোকান ও রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে কিছু বৈধ এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারে, দরকার হলে বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে একটা ফরমাল চ্যানেল তৈরি করা উচিত। নির্বাচিত এজেন্ট বৈধভাবে টাকা পাঠানোর জন্য দেশে কিছু প্রণোদনা পাবেন।

আন্তঃব্যাংক সংযোগ দুর্বল

ব্যাংকিং ব্যবস্থা তথাকথিত ধনীদের জন্য তৈরি। এখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দর্শন নেই, বরং আছে বর্ণবাদের চর্চা। গরিব, স্বল্প শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত মানুষের জন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা সহজ হয়নি। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের শাখা নেই। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ডিজিটাল যুগেও বাংলাদেশের সব ব্যাংকের এটিএম বুথে সব ব্যাংকের টাকা উঠানো কিংবা জমা দেয়া যায় না। এক ব্যাংকের ব্রাঞ্চে অন্য ব্রাঞ্চের আর্থিক সেবা পাওয়া তো দূরের বিষয়। অর্থাৎ ব্যাংক খাত নিজেদের মধ্যেই আন্তঃসংযুক্ত নয় বলে গ্রামীণ সমাজে ব্যাংকিং সেবা প্রাপ্ত কঠিন। বিদেশি রেমিট্যান্স হাবের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং যুক্ত হওয়ায় এই সমস্যা কিছু কমলেও সেখানে আছে স্ক্যামিংয়ের অভিযোগ। অভিযোগ আছে, মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরাই হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত। মোবাইল ব্যাংকিংকে শক্তিশালী মনিটরিং ও অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা দরকার।

হুন্ডি একদিকে সহজলভ্যতা, অন্যদিকে হুন্ডির হোম সার্ভিস একটা বড় সেবা। ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করলেও আস্থা তৈরি করতে পারেনি। ব্যাংক খাত কীভাবে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে হোম সার্ভিস দিতে পারে, তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।

বিমানবন্দরে অমার্জিত আচরণ এবং কম বিমিনয় হার

বিমানবন্দরগুলোতে প্রবাসীদের সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার করা হয় না। অদক্ষ শ্রমিকদের আচরণগত প্রশিক্ষণও নেই। প্রবাসীদের সম্মান দেয়া ও কথা শোনার মানসিকতা তৈরি করতে পারলে আস্থা তৈরি হবে। হয়রানির কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের প্রতি প্রবাসীদের ঘৃণা ও আতঙ্ক বিরাজমান। হুন্ডির মাধ্যমে এসবের প্রতিবাদ জানান প্রবাসীরা।

বিমানবন্দরে অবস্থিত ব্যাংকের ‘মানি এক্সচেঞ্জ’গুলো বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ে সবচেয়ে বেশি ঠকায়। বিপরীতে এসব ‘মানি এক্সচেঞ্জ’-এ সর্বোচ্চ আকর্ষণীয় বিনিময় হার নিশ্চিত করা গেলে হুন্ডির একটা অংশ রিজার্ভে ফিরবে। পাশাপাশি বৈধপথে উচ্চ প্রবাসী আয় আনয়নকারীদের লাউঞ্জ সুবিধা, লাগেজ হ্যান্ডলিংসহ বিমানবন্দরে কিছু বাড়তি সুবিধা দেয়া যেতে পারে।

দেশের অভ্যন্তরে এবং স্থলবন্দরেমানি এক্সচেঞ্জমনিটরিং

বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের সহজ ও হয়রানিমুক্ত আকর্ষণীয় বিনিময় হারের সেবা দেশের সব থানা ও উপজেলা এবং স্থল-নৌ-সমুদ্র বন্দরের সুনির্দিষ্ট ব্যাংক শাখায় থাকা চাই। এটা নিশ্চিত করে ‘মানি এক্সচেঞ্জ’গুলোকে নিবিড় মনিটরিং করতে হবে। দেশে-বিদেশে কারা হুন্ডি এজেন্ট, কারা বড় পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে, কারা মুদ্রা ব্যবসা (ফরেক্স) করেÑএসব সহজেই বের করা যায়, দরকার ঘুষ না খাওয়ার সততা। প্রশাসনের লোকরা তাদের ভালোই চিনেন। কিন্তু তারা নিজেরাই যদি উপার্জিত কালো টাকা বেগমপাড়ায় পাচারের ধান্ধায় থাকেন তাহলে হুন্ডি থামবে কী করে!

টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর, অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবিত কথামালা, উন্নয়ন প্রশ্নে বাংলাদেশের কিছু সংকট ও সম্ভাবনা

[email protected]