প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

১৭ মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ১২,৪৯৪ কোটি টাকা

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

ইসমাইল আলী: গত বছর জুনে বাড়ানো হয়েছিল সব ধরনের গ্রাহকের গ্যাসের দাম। এর মাত্র আট মাসের মাথায় আবারও বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। তবে এবার সব খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। শিল্প, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ ও বাণিজ্যিক খাতে বেড়েছে গ্যাসের দাম, যা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর মধ্যে বিদ্যুতে সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় প্রায় তিনগুণ হয়ে যাবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৫ টাকা ০২ পয়সা। ফেব্রুয়ারি থেকে তা বেড়ে হচ্ছে ১৪ টাকা। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ১৭৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে মাসে ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা। এতে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১৭ মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মোট ব্যয় বাড়বে প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ গ্যাসে উৎপাদিত হয়। গত অর্থবছর গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি ব্যয় ছিল গড়ে ৩ টাকা ৪৭ পয়সা। আর বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ছিল (মে পর্যন্ত) প্রতি ঘনমিটার ৪ টাকা ৪৫ পয়সা। জুনে তা বেড়ে হয় ৫ টাকা ০২ পয়সা। আগামী মাস থেকে এ দাম বেড়ে হচ্ছে ১৪ টাকা। অর্থাৎ মে মাসের তুলনায় দাম বেড়েছে প্রায় ২১৫ শতাংশ। এ হিসাবে গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে গড়ে ১০ টাকা ৯২ পয়সা।

সূত্র জানায়, আগামী মাসে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৮৫ এমএমসিএফডি। আগের দামে এ গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ত ৩৭৭ কোটি টাকা। তবে নতুন দামে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে এক হাজার ৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে ফেব্রুয়ারিতে ব্যয় বাড়বে ৬৭৫ কোটি টাকা। একইভাবে মার্চে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার দুই এমএমসিএফডি। এ গ্যাসে আগের দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ত ৪২৭ কোটি টাকা। নতুন দামে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে এক হাজার ১৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বাড়বে ৭৬৪ কোটি টাকা।

পরের তিন মাসে (এপ্রিল, মে ও জুন) বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৬৪ এমএমসিএফডি, এক হাজার ১৩ এমএমসিএফডি ও ৯৯৬ এমএমসিএফডি। এ গ্যাসে আগের দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ত যথাক্রমে ৪৫৪ কোটি, ৪৩২ কোটি ও ৪২৫ কোটি টাকা। তবে নতুন দামে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে যথাক্রমে এক হাজার ২৬৫ কোটি, এক হাজার ২০৪ কোটি ও এক হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এপ্রিলে ব্যয় বাড়বে ৮১১ কোটি টাকা, মে মাসে ৭৭২ কোটি টাকা ও জুনে ৭৬০ কোটি টাকা।

এ হিসাবে গ্যাসের বর্ধিত দামে চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট পাঁচ মাসে (ফেব্রুয়ারি-জুন) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়বে মোট পাঁচ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। আগের হিসাবে এ ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ১১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বাড়বে তিন হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

এদিকে আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে জুলাইয়ে এক হাজার ৪০ এমএমসিএফডি, আগস্টে এক হাজার ৩৬, সেপ্টেম্বরে এক হাজার ১২, অক্টোবরে ৯৯৩, নভেম্বরে ৮৯৫, ডিসেম্বরে ৮৩৭, জানুয়ারিতে ৮০৩, ফেব্রুয়ারিতে ৮৪০, মার্চে ৯৩৭, এপ্রিলে এক হাজার ৩৩, মে মাসে ৯৮৩ ও জুনে এক হাজার ৯ এমএমসিএফডি।

এ গ্যাসে আগামী অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে যথাক্রমে জুলাইয়ে ৭৯৪ কোটি, আগস্টে ৭৯০ কোটি, সেপ্টেম্বরে ৭৭২ কোটি, অক্টোবরে ৭৫৮ কোটি, নভেম্বরে ৬৮৩ কোটি, ডিসেম্বরে ৬৩৮ কোটি, জানুয়ারিতে ৬১২ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ৬৪১ কোটি, মার্চে ৭১৫ কোটি, এপ্রিলে ৭৮৮ কোটি, মে মাসে ৭৫০ ও জুনে ৭৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছর ব্যয় বাড়বে মোট আট হাজার ৭১১ কোটি টাকা। এতে ১৭ মাসে (চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ব্যয় বাড়বে মোট ১২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গড়ে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ঘনফুট বা ২৮ দশমিক ৩১৬৮ ঘনমিটার। তবে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস বা বৃদ্ধি করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ও পরিবর্তন হবে।

এদিকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়ার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে জনগণের কাঁধে। ফেব্রুয়ারিতে আবারও বাল্ক (পাইকারি) ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। এরই মধ্যে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সূত্র জানায়, বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য ১০ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ দাম বাড়তে পারে। সরকারের নির্বাহী আদেশে এ দাম বাড়ানো হবে।

চলতি মাসেই সরকারের নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম পাঁচ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে বাল্ক মূল্যহার গড়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়।