শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০১৭ সালেও চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পাবে বলে আভাস দিয়েছে দেশটির সরকারি এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সোমবার সরকারি ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুশিয়ার করেছে, আগামী বছর ইউয়ানের দরপতনও অব্যাহত থাকবে। খবর রয়টার্স।
চায়না একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্স (সিএএসএস) বলেছে, আগামী বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে গড়ে ছয় দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর মধ্য প্রথম দুই প্রান্তিকে হবে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ করে আর শেষের দুই প্রান্তিকে হবে ছয় দশমিক চার শতাংশ হারে।
ওই সময় দেশটির মুদ্রা ইউয়ানের দর আগামী বছরে আরও তিন থেকে পাঁচ শতাংশ নেমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষক জিন বসোং।
চলতি ২০১৬ সালে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের দাম ছয় শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। জিন বসোং বলেছেন, ইউয়ানের দরপতনের কারণে ২০১৭ সালে চীনের রফতানি চার থেকে ছয় শতাংশ বাড়বে। এছাড়া আমদানি বাড়বে দুই থেকে চার শতাংশ। এছাড়া ওই সময় ভোগ্যপণ্যে দুই দশমিক দুই শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে। আর সাকুল্যে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে প্রায় দুই শতাংশ।
সিএএসএসের মতে, আগামী বছর দেশটিতে স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ বাড়বে আট দশমিক ৯ শতাংশ। আর বাজারে খুচরা বিক্রি বাড়বে ৯ দশমিক পাঁচ শতাংশের বেশি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেশটিতে প্রবৃদ্ধির গড় হার হবে ছয় দশমিক ছয় থেকে ছয় দশমিক আটের মধ্যে।
বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম শক্তি চীন। কিন্তু গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ছয় দশমিক ৯ শতাংশ, যা প্রায় ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। চলতি বছরও দেশটির প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি বজায় থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে অক্টোবরে টানা চতুর্থ মাসের মতো চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে পতন ঘটেছিল। ওই সময় দেশটির রিজার্ভ কমেছে ৪৫ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার। ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির রিজার্ভ ২০১১ সালের পর সর্বনি¤েœ পৌঁছায়।
সাম্প্রতিক সময়ে চীনা অর্থনীতিতে শ্লথগতি দেখা দেওয়ার পর থেকে দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ কমেই চলেছে। গত বছরের মে মাস নাগাদ রিজার্ভ হ্রাসের পরিমাণ ছিল ৫১৩ বিলিয়ন ডলার। চীনের ইতিহাসে রিজার্ভে সবচেয়ে বড় বার্ষিক পতন ছিল সেটি। এছাড়া সেপ্টেম্বরে চীনের শিল্প খাতে মুনাফার প্রবৃদ্ধিও কমেছে।
এনবিএসের তথ্যমতে, ইলেকট্রনিকস, স্টিল ও বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির কারণে সব মিলিয়ে শিল্প মুনাফা প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চীনে শিল্প খাতে মুনাফা বেড়েছে আট দশমিক চার শতাংশ। জানুয়ারি থেকে আগস্টেও প্রবৃদ্ধি একই ছিল।
খননকারী কোম্পানিগুলো সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক তিন শতাংশ মুনাফা বেড়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে টানা পতনের পর এটাই প্রথম বৃদ্ধি। আগস্টে এ খাতে মুনাফা কমেছিল ২৫ দশমিক তিন শতাংশ।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর মুনাফা সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ছয় শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারির পর এটা সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি।
প্রথম আট মাসে ৪১টি শিল্প খাতের মধ্যে ৩১টিতে মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম প্রক্রিয়াকরণ, পারমাণবিক জ্বালানি প্রক্রিয়াকরণ, লৌহঘটিত ধাতু বিগলনসহ কিছু খাতে মুনাফা দিগুণ হয়েছে।
অন্যদিকে প্রথম ৯ মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর মুনাফা পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ কমেছে। এছাড়াও তেল ও গ্যাস খাতেও লোকসান হয়েছে।
এদিকে এক জরিপে দেখা গেছে, চীনের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা কর্মশক্তি হারিয়ে এখন বৃদ্ধ। তাই ২০৫০ সালের মধ্যে চীনের কর্মশক্তি ২৩ শতাংশ কমে যেতে পারে।
দেশটিতে যাদের বয়স ১৬ থেকে ৫৯, তাদের কর্মশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ ২২০ মিলিয়ন জনগণের বয়স ৬০-এর ওপরে।
দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লি জং পূর্বাভাস দিয়ে বলেন, ৯১১ মিলিয়ন কর্মশক্তি ২৩ শতাংশ কমে ২০৫০ সালে ৭০০ মিলিয়নে নেমে আসতে পারে।