শেয়ার বিজ ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্য ব্যাংক অব কোরিয়া (বিওকে) মনে করছে ২০১৭ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে। দেশ-বিদেশে চলমান অস্থিতিশীলতাকে এর কারণ হিসেবে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর গ্লোবাল টাইমস।
প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাইকে অভিশংসন করায় রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তারা তাদের ব্যয় কমিয়ে দেবে এবং বিনিয়োগকারীরাও অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) চলতি মাসে সুদের হার বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ২০১৭ সালে আবারো সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে ফেড। এর প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক বাজার থেকে সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগ দলবদ্ধভাবে প্রস্থান করবে এমনই আশঙ্কা করছে বিশ্লেষকরা। ফলে পরোক্ষভাবে ফেডের সিদ্ধান্তে দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশ-বিদেশে এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিকে দেওয়া প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
বিওকে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাদের নীতিনির্ধারণী সভায় সুদের হার ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ রেখেছিল। চলতি বছরের জুনে এটি কমিয়ে ১ দশমিক ২৫ শতাংশে নিয়ে এসেছে। ব্যাংকটি ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের জন্য ওই হার স্থির রেখেছে।
বিওকে ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি দুই দশমিক আট শতাংশ নির্ধারণ করেছে। দুই মাস আগে দেওয়া সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির তুলনায় এ হার কম। আগামী মাসে ব্যাংকটি আরও একবার আগামী বছরের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ঘোষণা করবে।
অধিকাংশ স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কোরিয়া ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (কেডিআই) প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ২ দশমিক চার শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছে।
এছাড়া কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স (কেআইএফ) ২ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং এলজি ইকোনমিক রিচার্স ইনস্টিটিউট (এলজিইআরআই) ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে ছয় সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভের পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইকে অভিসংশনের পক্ষে রায় দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্টের সদস্যরা।
ব্যক্তিগত লাভের লক্ষ্যে পুরোনো বন্ধু চাই সুন সিলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অপব্যবহারের অভিযোগে ওঠে। আর এরপর থেকে পার্ককে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বিরোধী দলগুলো রাজপথে দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ করেছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো প্রেসিডেন্টের মেয়াদ পূর্ণ করতে না পেরেই ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলেন। প্রেসিডেন্ট পদে পার্ক জিউন হাইয়ের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির অর্থনীতির জন্য সামগ্রিকভাবে এ বছর ভালো যায়নি। একের পর এক কোরীয় কনগ্লোমারেট নানা কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বহুল আলোচিত নোট ৭ স্মার্টফোন বিস্ফোরণের কারণে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসকে বিপুল পরিমাণ পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও স্যামসাংকে ইমেজ সংকটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম নৌপরিবহন কোম্পানি হানজিন শিপিং লাইনস ভেঙে পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম রিটেইলার লোটে গ্রুপের কর্ণধারকে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসভঙ্গের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। জাহাজ নির্মাণ সংস্থা স্যামসাং, হুন্দাই, এসটিএক্স; গাড়ি নির্মাতা হুন্দাই ও ইস্পাত কোম্পানি পসকো পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। করপোরেট কোরিয়ার এ দুর্দশার মধ্যে বাড়তি শঙ্কার কারণ হয়ে এসেছে কোরীয় পরিবারগুলোর রেকর্ড পরিমাণ ঋণ। ব্যাংক অব কোরিয়ার গভর্নর লি জু-ইয়োল বলেছেন, রেকর্ড পরিমাণ গৃহস্থালি ঋণ আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।