প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

২০২২ সালে বাইক নিবন্ধন বেড়েছে রেকর্ড ৩৫ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্রুত ও সহজ যোগাযোগমাধ্যম হওয়ায় বাইকের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষ করে যানজটের কারণে অন্যান্য বাহনের চেয়ে শহরাঞ্চলে বাইকের জনপ্রিয়তা বেশি। এ কারণে দেশে প্রতি বছর বাড়ছে বাইকের সংখ্যা। শুধু এক বছরেই (২০২২ সালে) বাইক নিবন্ধন বেড়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬৬০টি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বাইক নিবন্ধনের সংখ্যা ওঠানামা করেছে। তবে বিদায়ী বছরে দেশে সর্বোচ্চ বাইক নিবন্ধন নেয়। মূলত বাইক বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়া ও আইনের কড়াকড়ির কারণে এ সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গত বছর নিবন্ধন নেয়া বাইকের প্রায় এক-চতুর্থাংশই ছিল ঢাকায়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, দেশে গেল বছর পাঁচ লাখ ৬ হাজার ৯১২টি বাইক নিবন্ধন নেয়। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৭৫ হাজার ২৫২টি। অর্থাৎ এক বছরে বাইক নিবন্ধন বেড়েছে ৩৫ শতাংশের বেশি। এর আগে সর্বোচ্চ বাইক নিবন্ধন নেয় ২০১৯ সালে। ওই বছর চার লাখ এক হাজার ৪৫২টি বাইক নিবন্ধন নেয়।

এদিকে গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে কম বাইক নিবন্ধন নেয় ২০১৩ সালে। ওই বছর বাইক নিবন্ধন নিয়েছিল ৮৫ হাজার ৩২১টি। আর ২০১৪ সালে ৯০ হাজার ৪০১টি বাইক নিবন্ধন নেয়। মূলত বিআরটিএ’র ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর ওই দুই বছর বাইক নিবন্ধন অনেক কমে যায়। তবে ফি কমানোয় পরের বছরই (২০১৫ সালে) বাইক নিবন্ধন আবার বৃদ্ধি পায়। ওই বছর দুই লাখ ২৯ হাজার ১০টি বাইক সারাদেশে নিবন্ধন নেয়।

এর বাইরে ২০১১ সালে দেশে বাইক নিবন্ধন নেয় এক লাখ ১৬ হাজার ৫৪৩টি, ২০১২ সালে এক লাখ এক হাজার ৮০৫টি, ২০১৬ সালে তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৯টি, ২০১৭ সালে তিন লাখ ২৫ হাজার ৮৭৬টি, ২০১৮ সালে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৫৪৫টি ও ২০২০ সালে তিন লাখ ১১ হাজার ১৬টি। বিআরটিএর হিসাবে, ২০২২ সাল শেষে দেশে নিবন্ধন নেয়া বাইকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি।

যদিও বাইক আমদানিকারক ও দেশি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি আগের তুলনায় গত বছর বাইক বিক্রি কম হয়েছে। বিশেষ করে শেষ চার মাসে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) বাইক বিক্রি বেশ কিছুটা কমেছে। তবে সব মিলিয়ে ২০২২ সালে করোনাকালীন মানুষের চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে বাইক রাইডার বা ফুড ডেলিভারিতে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অন্যদিকে করোনাকালীন মানুষ যাতায়াতে গণপরিবহন ব্যবহার না করে অনেকেই বাইক ব্যবহারে ঝুঁকেছেন। আর শহরের পাশাপাশি দেশব্যাপী ট্রাফিক পুলিশ কড়াকড়ি হওয়ায় মানুষ এখন বাইক নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো বিষয়গুলোয় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এসব কারণে গত বছর বাইক নিবন্ধন বেড়েছে।

এদিকে গত এক যুগে ঢাকায়ও বাইক নিবন্ধন ওঠানামা করেছে। ২০১১ সালে ঢাকায় বাইক নিবন্ধন নেয় ৩৪ হাজার ৭০৭টি, ২০১২ সালে ৩২ হাজার ৮০৮টি, ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ৩৩০টি, ২০১৪ সালে ৩২ হাজার ৮৯১টি, ২০১৫ সালে ৪৬ হাজার ৭৫৮টি ও ২০১৬ সালে ৫৩ হাজার ৭১৮টি। পরের বছর তা অনেকটা বৃদ্ধি পায়। ওই বছর নিবন্ধন নেয়া বাইকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৫ হাজার ২৫১টি। ২০১৮ সালে তা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। সে বছর নিবন্ধন নেয় এক লাখ চার হাজার ৫১টি বাইক।

যদিও পরের তিন বছর আবারও বাইক বিক্রি এক লাখের নিচে নেমে আসে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ঢাকায় বাইক নিবন্ধন নেয় ৯৯ হাজার ২৫২টি, ২০২০ সালে ৭৮ হাজার ৫৫১টি ও ২০২১ সালে ৯৯ হাজার ৮১০টি। আর গত বছর ঢাকায় বাইক নিবন্ধন নিয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৮৪৮টি। এ হিসাবে গত বছর ঢাকায় বাইক নিবন্ধন বেড়েছে ২১ হাজার ৩৮টি বা ২১ শতাংশের বেশি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. শামছুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শহরে বাইক দ্রুত বৃদ্ধি মানে গণপরিবহন অনুৎসাহিত হওয়া। ঢাকায় তা আমরা দেখতেও পাচ্ছি। বিশ্বের অনেক শহর এভাবে অনিয়ন্ত্রিত বাইক অনুমোদন দিয়ে বিপদে পড়েছিল। পরে তারা আইন করে শহরে বা বিশেষ এলাকায় বাইক নিষিদ্ধ করে। ঢাকাতেও যে হারে বাইক বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা এ শহরের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠছে। এছাড়া ঢাকাতে সড়ক দুর্ঘটনার বড় অংশই বাইকের। তাই এখনই বাইকসহ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়া উচিত।’

বিআরটিএর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর নিবন্ধন নেয়া (সব ধরনের) যানবাহনের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ১৫১টি। এর মধ্যে বাইক নিবন্ধন নিয়েছে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৯১২টি। অর্থাৎ নিবন্ধন নেয়া যানবাহনের মধ্যে বাইক ৮৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। যদিও গত কয়েক বছরে বাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রাণহানিও বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে। তাই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে আরও দেখা যায়, গেল বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালে দেশে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে এর মধ্যে বেশি হারে বেড়েছে বিলাসবহুল জিপ। ২০২১ সালে দেশে বিলাসবহুল জিপ নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৬০২টি। গত বছর তা নিবন্ধন নিয়েছে ১০ হাজার ২৪০টি। অর্থাৎ গত বছর বিলাসী জিপ নিবন্ধন বেড়েছে দুই হাজার ৬৩৮টি বা ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২০ সালে দেশে বিলাসী জিপ নিবন্ধন নিয়েছিল চার হাজার ৪৯১টি।

এদিকে ২০২১ সালে দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৬৯৫টি। গত বছর নিবন্ধন নিয়েছে ১৬ হাজার ৪৯টি। অর্থাৎ গত বছর ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন বেড়েছে ৪ শতাংশ। ২০২০ সালে দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন নিয়েছিল ১২ হাজার ৪০৩টি। আর ২০২১ সালে দেশে মাইক্রোবাস নিবন্ধন নেয় সাত হাজার ৩৯৯টি। গত বছর এর পরিমাণ ছিল চার হাজার ৯৪১টি। এ হিসাবে, গত বছর মাইক্রোবাস নিবন্ধন বেড়েছে দুই হাজার ৪৫৮টি বা প্রায় ৫০ শতাংশ। ২০২০ সালে দেশে মাইক্রোবাস নিবন্ধন নিয়েছিল দুই হাজার ৭৭৯টি।

গত বছর নিবন্ধন নেয়া অন্যান্য মোটরযানের মধ্যে ট্রাক, পিকআপ ও ডেলিভারি ভ্যানের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে কাভার্ডভ্যান ও তেলবাহী ট্যাংকারের সংখ্যা। ২০২২ সালে দেশে নিবন্ধন নেয়া ট্রাকের সংখ্যা ছিল চার হাজার ৫২৮টি, পিকআপ ৯ হাজার ৮০৪টি, ডেলিভারি ভ্যান এক হাজার ১৬৭টি, কাভার্ডভ্যান চার হাজার ৪২৪টি ও ট্যাংকার ৪০৯টি। ২০২১ সালে এসব মোটরযান নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে পাঁচ হাজার ৭৮৯টি, ১০ হাজার ৮৯৭টি, এক হাজার ৪৩৬টি, তিন হাজার ৮০০টি ও ২৪৮টি।

গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য যানবাহনের মধ্যে গত বছর বাস নিবন্ধন নিয়েছে দুই হাজার ৬৮৮টি ও মিনিবাস ৪০২টি। ২০২১ সালে এ দুটি যান নিবন্ধন নিয়েছিল যথাক্রমে এক হাজার ৫১৭টি ও ৩৯২টি।