প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

২০২৭ পর্যন্ত এলডিসি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, বাংলাদেশের জন্য ২০২৭ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। তবে বাংলাদেশ ২০২৪ সালেই এলডিসির তালিকা থেকে বের হবে। এ লক্ষ্যে ২০১৮ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে আসার বিষয়ে পর্যালোচনা শুরু হবে।

ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) প্রকাশিত এলডিসি প্রতিবেদন-২০১৬তে এসব কথা বলা হয়েছে। আঙ্কটাডের পক্ষে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গতকাল প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এলডিসি থেকে বের হওয়ার জন্য ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় লক্ষ্যগুলো প্রাথমিকভাবে অর্জন করতে পারবে। এক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এ তিনটি সূচকের মধ্যে কমপক্ষে দুটিতে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। এরপর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২১ সাল পর্যন্ত অর্জনগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পরে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এলডিসি তালিকা থেকে বের হয়ে আসার বিষয়ে অনুমোদন পেতে হবে।
‘দ্য লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিস রিপোর্ট-২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয় ‘উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করলেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশের সুযোগ-সুবিধা পাবে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া দেশটি।’ ২০১৫ সালের এলডিসি প্রতিবেদনেও এমন সম্ভাবনার কথা বলেছিল আঙ্কটাড। এর আগে জুনে আঙ্কটাডের বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০১৬-এ বলা হয়, বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ২০১৫ সালে।
সংস্থাটির দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৩ কোটি ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে। দেশের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ এফডিআই। ২০১৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ চার হাজার ৪২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে ভারতে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ১৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছিল।
তবে উন্নয়ন কেবল প্রবৃদ্ধি ও রফতানি আয় বাড়ার হিসাব দিয়ে উন্নয়নকে পরিমাপ করা ঠিক হবে না বলে মনে করে সিপিডি। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু এলডিসি থেকে উত্তরণ গুরুত্বপূর্ণ নয়; কতটা মসৃণ ও টেকসইভাবে উত্তরণ হচ্ছে, সেটাই বড় কথা। গতিবেগ নিয়ে এলডিসি থেকে উত্তরণ হতে হবে, যাতে পরবর্তী সময়ও এগিয়ে যাওয়া যায়। এছাড়া ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই হলে মসৃণ ও টেকসইভাবে উত্তরণ হওয়া যায়, সে জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা উচিত।
উন্নয়নের আধুনিক ধারণায় কেবল প্রবৃদ্ধি ও রফতানি আয়ই প্রধান নির্দেশক হওয়া উচিত নয়। বরং বিবেচনা করতে সামাজিক বঞ্চনা কমছে কি না, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে কি না এবং পরিবেশ সুরক্ষায় কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেসব বিষয়ের ওপর। পাশাপাশি মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এ দুটি সূচকেই বাংলাদেশকে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।