প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

২০৩০ সাল নাগাদ জিডিপির পাঁচ শতাংশ হারাবে বাংলাদেশ

করোনাকালে স্কুল বন্ধের প্রভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক থেকে ওই মাসের ১৭ তারিখ দেশের সব স্কুল-কলেজে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কয়েক দফায় এ ছুটির ব্যাপ্তি ছিল দেড় বছরেরও অধিককাল। এরপর অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও ডিজিটাল ডিভাইডের কারণে অনেকে সে সুযোগ গ্রহণ করতে পারেননি। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষে অটো প্রমোশন ও আংশিক পরীক্ষা নিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাস করানো হয়। এতে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপকহারে ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের জিডিপিতে শিক্ষা খাতের এ ক্ষতির ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে দেশের মোট জিডিপির প্রায় পাঁচ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল এক গবেষণাপত্র উপস্থাপনায় এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়। মোনাষ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আসাদ ইসলামের এক গবেষণায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষণাপত্র উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনসহ প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য গবেষকরা ও বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণার ফলাফলে উল্লেখ করা হয়, কভিডের ফলে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা খাতে যে ক্ষতিসাধিত হয়েছে, তা ২০৩০ নাগাদ বৈশ্বিক জিডিপিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে। এর ফলে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ১৩টি দেশে ওই সময় তাদের মোট জিডিপির এক শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর কয়েকটি দেশে এ ক্ষতি হবে প্রায় পাঁচ শতাংশের মতো। গবেষণার তথ্যমতে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ চার দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি হারাবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিরগিজ রিপাবলিকের জিডিপি। দেশটির জিডিপির পাঁচ দশমিক ৫৩ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া নেপালের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চার দশমিক ৯৭ শতাংশ, মোঙ্গলিয়ার জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চার দশমিক ৯২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চার দশমিক ৪৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তিন দশমিক ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুই দশমিক ৮৪ শতাংশ, কাজাখাস্তানের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুই দশমিক ২১ শতাংশ, তাজিকিস্তানের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক দশমিক ৭২ শতাংশ, কম্বোডিয়ার জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেড় শতাংশ, পাকিস্তানের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক দশমিক ৩৭ শতাংশ। এশিয়ার অন্যান্য দেশে জিডিপির ক্ষতি এক শতাংশের নিচে থাকবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণার তথ্যে জানানো হয়, করোনার প্রভাবে বিশ্বের মোট ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। এর মধ্যে দুই কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। করোনার কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় গড়ে ৩৭৫ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়।

গবেষণার ফলে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মাত্র পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ খানায় কম্পিউটারের সুবিধা আছে। আর সক্রিয় ইন্টারনেট সুবিধা আছে মাত্র ১৩ শতাংশ খানার ক্ষেত্রে। এতে করে অনলাইনে ক্লাস চালু করা হলেও অনেক শিক্ষার্থী সে সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। 

গতকাল আরেক অধিবেশনে গবেষণাপত্র উপস্থাপনায় জাপানের গবেষক অধ্যাপক তাতসুফুমি ইয়ামাগাতা উল্লেখ করেন, বিশ্বের বড় ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিবাদ মীমাংসায় বাংলাদেশের মতো মধ্যম পর্যায়ের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার বিবাদ নিরসনে তুরস্ক এমন ভূকিা রেখেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাপান বর্তমানে বাংলাদেশকে আর অনুদান গ্রহণকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করে না। বাংলাদেশ সম্পর্কে জাপানের দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে জাপান বাংলাদেশকে একটি অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। এছাড়া জাপানের মানুষ এখন উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার পরিবর্তে ব্যবসায় বিনিয়োগের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটি থেকে বেশকিছু বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।