অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযান শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। চলতি আমন মৌসুমে সিরাজগঞ্জের ৭টি সরকারি খাদ্যগুদামে এবার ৩ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৫৫ দিন পার হলেও ৬টি গুদামে এখন পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। মাত্র একটি গুদামে ২০০ কেজি ধান সংগ্রহ হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের তথ্য মতে, বর্তমান বাজার দরের চেয়ে সরকারি দাম প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা কম হওয়ায় কৃষকরা সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেন না। এছাড়া ধানের মানের বিষয়ে কড়াকড়ি ও টাকা পাওয়া নিয়ে ব্যাংকে ঘোরাঘুরি, অ্যাপে নিবন্ধন, লটারি সংক্রান্ত ঝামেলা, পরিবহন খরচসহ নানা হয়রানি পোহাতে হয়। এ কারণে ধান সংগ্রহে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর আমন মৌসুমে ৯ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন চাল এবং ৩ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ১৬৩ দশমিক ৯৬০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হলেও প্রায় দুই মাসে ২০০ কেজির বেশি ধান কিনতে পারেনি খাদ্যগুদামগুলো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের ১৭ নভেম্বর ধান ও চাল সংগ্রহ শুরুর আগে প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়। ধান সংগ্রহ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৮ এবং চাল ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলার উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও সদর উপজেলার একাধিক কৃষক বলেন, সরকারি খাদ্যগুদামে দেয়া ধান একটু কম শুকানো হলে নিতে চায় না। তখন ধান নিয়ে আবার ফেরত আসতে হয়। আবার পরিবহন খরচ, গুদামের শ্রমিকদের নানা দাবিসহ এসব বাড়তি খরচ তো আছেই। আর বাজারের পাইকারদের কাছে ধান বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। কিছু কিছু পাইকার ধান মাড়াইয়ের পর বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যান। সার্বিকভাবে বর্তমানে সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে বিক্রি করলে ভালো দাম পাচ্ছি। গুদামে ধান দিলেও টাকা তুলতে সময় লাগে। সংসারের কাজ ছেড়ে টাকার জন্য অফিসে ঘোরার মতো সময় কোথায় আমাদের।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা চরের কৃষক আবুল হোসেন ও উল্লাপাড়া উপজেলার জামতৈল গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে এক টন ধান গাড়ি থেকে নামানোর জন্য খাদ্যগুদামের লেবাররাই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নেন। গাড়ি ভাড়া যায় ৫০০ টাকা। তার ওপর আরও অনেক সমস্যা। সেজন্য গুদামে ধান দেয়া হয়নি।
জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারেই ধান ও চালের মূল্য বেশি। বাজারে পর্যাপ্ত ধানও নেই। বেশি দামে ধান কিনে গুদামে কম দামে চাল সরবরাহ করব কীভাবে। এ বছর আবার মোট বিলের ওপর ২ শতাংশ উৎস কর ধরা হয়েছে। এজন্য অনেক মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন না।
রায়গঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নিয়ামুল হক বলেন, কৃষকদের ধান দিতে মাইকিং করা হলেও আমরা এখন পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনেকটাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।
কাজীপুর উপজেলার খাদ্য সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা (এলএসডি) পলাশ চন্দ্র সূত্রধর বলেন, প্রায় দুই মাস আগে উদ্বোধনের দিন মাত্র ২০০ কেজি ধান সংগ্রহ করেছি। এরপর আর কোনো ধান আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চাল কিছুটা সংগ্রহ করতে পারলেও ধান সংগ্রহ করতে পারছি না। কারণ কৃষকরা খোলা বাজারেই ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে ধান-চাল সংগ্রহের বিষয়ে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি মিলারদের ধান দিতে চিঠি দেয়া হচ্ছে। যে মিলাররা চুক্তি করেও ধান দিচ্ছেন না তাদের চিহ্নিত করে আলাদা তালিকা করা হচ্ছে। তবে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সংগ্রহের অভিযান সফল হবে।
কক্সবাজার–মহেশখালী নৌঘাট