মনিরুল ইসলাম টিটো, ফরিদপুর : পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ফরিদপুরে সব সড়কেই যানবাহন চলাচল বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। সে অনুপাতে বাড়েনি জনবলসহ অন্য সাপোর্ট। ফলে মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। এ পরিস্থিতিতে মামলা দিয়েও গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নে থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প রয়েছে সাতটি; যার মাধ্যমে আটটি মহাসড়কের ৩৮১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রতিটি স্টেশনে দুটি করে মোট ১৬ স্পিডগান রয়েছে এসব মহাসড়কের গতি নিয়ন্ত্রণে। হাইওয়ে পুলিশের দাবি, মামলা দিয়েও কমানো যাচ্ছে না অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা। কর্মকর্তারা বলছেন, গতি কমাতে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যবসা জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
ফরিদপুরে অবস্থিত মাদারীপুর হাইওয়ের রিজিয়নের দায়িত্বরত পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ রিজিয়নের অধীনে এন-৮, এন-৮০৫, এন-৮০৪, এন-৭, এন-৮০৬, আর-৭১০ ও আর-৮৬০ মহাসড়কের ৩৮১ কিলোমিটার মসহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েও অন্তর্ভুক্ত।
রিজিয়নের পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সহকারী পুলিশ সুপারের দপ্তরসহ আটটি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে আগে থেকেই মোট জনবল রয়েছে ২৬৫ জন। এর মধ্যে পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন ৬০ জন আর ১৫ জন রয়েছেন প্রধান কার্যালয়ে প্রেষণে। পুলিশ স্টেশনগুলোর মধ্যে পাংশা হাইওয়ে থানায় সর্বনি¤œ ২১ জন এবং ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় সর্বোচ্চ ৩৪ জন কর্মরত আছেন। বেশিরভাগ থানায়ই একজন ওসি, একজন সার্জেন্ট ও একজন এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। শুধু এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাই দুর্ঘটনাজনিত মামলার তদন্ত করতে পারেন।
জানা গেছে, গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর এসব মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল বেড়েছে তিন থেকে পাঁচগুণ। যদিও ব্যস্ততা বাড়লেও এসব পুলিশ স্টেশনগুলোতে বাড়েনি জনবলের সংখ্যা। এমনকি আটটি স্টেশনে মাত্র দুটি করে স্পিডগান থাকায় এবং জনবল বৃদ্ধি না করায় একাধিক চেকপোস্ট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এসব স্টেশনের অধীনে সর্বনিন্ম শিবচর হাইওয়ে থানার অধীনে ২৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে; যার উভয় প্রান্ত বিবেচনায় ৫৬ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অধীনে ৭৮ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে।
মাদারীপুর হাইওয়ের রিজিয়নের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, মহাসড়কে যান চলাচলে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা থাকলেও, অনেক চালকই তা মানছেন না। তিনি জানান, ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এ রিজিয়নের অধীনে চেকপোস্ট বসিয়ে আট হাজার ৯২টি মামলা রুজু করা হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ৪৯২টি মামলা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো সংক্রান্ত। এত মামলা রুজু করার পরও বেপরোয়া গতি থামানো যাচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি মালিক-কর্তৃপক্ষের দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্টান্ডে পৌঁছানোর চাপই দায়ী। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, মাদারীপুর রিজিয়নের অধীনে ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত ২২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু নিয়মিত মামলা হয়েছে ৩৭টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৬৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৩০৭ জন।
মাদারীপুরে শিবচরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা লঙ্ঘন করায় দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে হাইওয়ে পুলিশ। শিবচর হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গতিসীমা লঙ্ঘন করায় গত মাসে ২৮৪টি ও জানুয়ারিতে ৩১৫টি মামলা করা হয়।
গত ১৯ মার্চ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী এমাদ পরিবহনের একটি বাস রাস্তার পাশে খাদে পড়ে অন্তত ১৯ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন।
পরে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটি বুধবার প্রতিবেদন দিয়েছে। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের কাছে ১৪ দফা সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরার নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া ড্রাইভিং এবং অনুপযুক্ত যানবাহনকে দায়ী করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চালকের কাছে মাঝারি আকারের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স থাকলেও তিনি বৃষ্টির মধ্যে ভারী যানবাহন চালাচ্ছিলেন। পল্লব কুমার বলেন,
বিআরটিএ গোপালগঞ্জ গত বছরের ১৭ নভেম্বর বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে এমাদ পরিবহনের বাসের নিবন্ধন স্থগিত করে এবং চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি গাড়িটির মেয়াদ শেষ হলেও নিয়ম লঙ্ঘন করে সড়কে চলাচল করে।