প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

৪১ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা: প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর

 

ইসমাইল আলী: ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে দ্বিপক্ষীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৪১টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ তালিকায় পরমাণু সহায়তা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, দ্বিপক্ষীয়ভাবে স্যাটেলাইটে যুক্ত হওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চুক্তি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

তথ্যমতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত ডিসেম্বরে  শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সফরটি পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে তা ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত করা হয়। ওই সফরে সইয়ের জন্য ৪১ চুক্তি ও এমওইউ’র মধ্যে ৩৬টির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি পাঁচটি চূড়ান্ত করে ভারতের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এজন্য ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর ভারত সরকারের সংস্থাগুলোর সঙ্গে এসব চুক্তি এবং এমওইউ স্বাক্ষর করবে। এর মধ্যে পরমাণু সহায়তাবিষয়ক একটি এমওইউ ও চুক্তি দুটি রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে পাঠানো এসব চুক্তির খসড়া বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরমাণু শক্তি ব্যবহার, পারমাণবিক নিরাপত্তা ও রেডিয়েশন প্রটেকশন এবং রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপ, ভারতের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাটমিক এনার্জি ও বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি।

টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিতে সহায়তাবিষয়ক তিনটি চুক্তি ও এমওইউ রয়েছে এ তালিকায়। এগুলো হলো: দুই দেশের মধ্যে মহাশূন্যবিষয়ক এমওইউ, জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে একটি কাঠামোগত চুক্তি সই ও সার্ক অঞ্চলের জন্য প্রস্তাবিত ৪৮ ডিগ্রির স্যাটেলাইট কার্যকরে অর্বিট ফ্রিকোয়েন্সি বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সমন্বয়বিষয়ক চুক্তি।

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ভারতের পণ্য আনা-নেওয়া এবং উপকূলীয় জাহাজ চলাচলে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই করা হবে। পায়রা বন্দরে ড্রাই বাল্ক টার্মিনাল ও বহুমুখী ব্যবহারের জন্য কনটেইনার নির্মাণেও পৃথক চুক্তি হবে। যৌথভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে এক সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে এমওইউ সই করবে পেট্রোবাংলা ও ভারতের পেট্রোনেট এলএনজি লিমিটেড। নৌপথে লাইট হাউজ স্থাপনেও দুই দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমঝোতা স্মারক সই করবে।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আরও বেশি বর্ডার হাট স্থাপন বিষয়ে এমওইউ সই হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সফরে যৌথ বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ থাকবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এতে স্বাক্ষর করবে। চিকিৎসাক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে এমওইউ সই করবে ভারতের জাতীয় মেডিসিনাল প্লান্ট বোর্ড ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

দুই দেশের নিরাপত্তাবিষয়ক বেশ কয়েকটি চুক্তি ও এমওইউ সই হবে। এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্রে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে দুই দেশের কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি এবং হোয়াইট শিপিং ইনফরমেশন আদান-প্রদানে দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে আরেকটি এমওইউ। জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত শিক্ষা সহায়তার অংশ হিসেবে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে পৃথক তিনটি এমওইউ সই হবে। এছাড়া খুলনা শিপইয়ার্ডের সঙ্গে ভারতের গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড একটি এবং নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও চট্টগ্রাম ড্রাই ডকইয়ার্ডের সঙ্গে দেশটির ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড তিনটি পৃথক এমওইউ সই করবে।

এদিকে শিক্ষা সহায়তার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি ভাষার ইসিসিআর চেয়ার প্রতিষ্ঠায় ভারতের কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এমওইউ সই হবে। তামিলনাড়–র ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে। এছাড়া খুলনার খালিশপুর গার্লস কলেজ নির্মাণেও সমঝোতা স্মারক সই হবে।

ভূতাত্ত্বিক গবেষণা ও উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার জন্য দুই দেশের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর হবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের টেকসই উন্নয়ন, সিলেট সিটি করপোরেশনের শিক্ষা ও উন্নত পরিবেশবিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণে দুটি এমওইউ সই হবে। এছাড়া রেলপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ভারতের কনকোর ও বাংলাদেশের কনটেইনার কোম্পানির মধ্যে এমওইউ সই হবে।

এদিকে জালনোট প্রতিরোধ এসওপি এবং সামরিক সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এছাড়া অডিও ভিজুয়াল সহযোগিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি পুনঃউন্নয়ন এবং খুলনায় ভোকেশনাল ট্রেনিং কলেজ স্থাপনে এমওইউ সই হবে।

এর বাইরে জে.সি. বোস সেন্টার ফর এক্সিলেন্সবিষয়ক এমওইউ, বিপিসি ও ভারতের এনআরএলের মধ্যে জ্বালানি তেল বেচাকেনাবিষয়ক চুক্তি, কুড়ি-১ বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রবিষয়ক বাংলাদেশ, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এমওইউ এবং সংশোধিত আরটিএবিষয়ক চুক্তি  সই হবে। এগুলোর খসড়া চূড়ান্তের কাজ চলছে।

জানতে চাইলে ড. মসিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরে যাচ্ছেন। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এরচেয়ে বেশি কিছু এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।