শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে জামানত নেওয়ার অভিযোগে মার্কিন কর্তৃপক্ষের করা জরিমানা থেকে ৭২০ কোটি মার্কিন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে জার্মানির ডয়েচে ব্যাংক। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ব্যাংকটিকে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার জরিমানা করে। তখন ডয়েচে ব্যাংক এত বেশি জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। খবর বিবিসি।
২০০৮ সালে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার সময় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবাসিক বন্ধকি জামানতের বিনিময়ে সিকিউরিটিজ বিক্রি করে জার্মানির অন্যতম বৃহৎ এ বিনিয়োগ ব্যাংক।
এত বড় অঙ্কের জরিমানা পরিশোধে ব্যাংকটির ব্যর্থতা বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার ওপর একটি গুরুতর বিপদ হতো বলে বিশ্লেষকরা উদ্বেগ জানিয়েছিলেন।
জার্মান বিশ্লেষকরা বলছেন, ডয়েচে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জরিমানার অর্ধেক পরিশোধে সম্মত হয়ে মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে বাকি জরিমানা থেকে অব্যাহতি পেতে চাচ্ছে। কিন্তু ৭২০ কোটি ডলার ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থায় পরিশোধের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ।
তারা বলছেন, এ জরিমানা পরিশোধ ডয়েচে ব্যাংক সদর দফতরে স্বস্তির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে সহায়তা করবে, কিন্তু শাস্তির অর্ধেক এখনও বাকি আছে।
ব্যাংকটির আরও বাজে পরিণতি হতে পারতো উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলছেন মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের এ শাস্তি সামনের বছরগুলোয় বিভিন্ন দেশের বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
জার্মান সরকারের অভিযোগ, ব্যাংকটি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ না করে বিনিয়োগকারীদের ভুল পথে পরিচালিত করেছে।
এদিকে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট জরিমানা পরিশোধের খবরে ডয়েচে ব্যাংকের বন্ড ও শেয়ারদর বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার ব্যাংকটির শেয়ারদর প্রায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।
ডয়েচে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের দাবি করা এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের অর্ধেক পরিশোধ করতে সম্মত হয়েছে তারা। বাকি জরিমানার বিষয়ে সমঝোতা করতে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। তারা আশা করছে, জরিমানা কমানো হবে।
এদিকে ব্লুমবার্গ বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকটিকে যে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়েছিল, তা দাবি করা অর্থের প্রায় তিনগুণ।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য অনুসারে, ডয়েচে ব্যাংকের ধারণা ছিল জরিমানা ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার হবে। যেখানে একই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে ব্যাংকটি এরই মধ্যে ১৯০ কোটি ডলার পরিশোধও করেছে।
এর আগে ২০১৪ সালে সিটি গ্রুপকে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তা ৭০০ কোটিতে দাঁড়ায়। একই ধরনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যাংকিং কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাকস গত এপ্রিলে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা দিয়েছে।
চলতি বছর জুনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানায়, ডয়েচে ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে।
গত জুলাইয়ে ব্যাংকটি জানায়, চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪৩ শতাংশ বাজারমূল্য হারিয়েছে। ব্যাংকটির নিট আয়ও প্রায় ১৮ মিলিয়ন ইউরো কমে গেছে।