জেদনী খাঁন : দেশের নামিদামি হাসপাতালগুলো সি-সেকশন বা সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। সহজ অস্ত্রোপচার ও অতি মুনাফার কারণে দেশের হাসপাতাল ও গাইনি চিকিৎসকদের মধ্যে এটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ফলে এখন শহরের ৮০ ভাগ এবং গ্রামের ৬৫ ভাগ প্রসূতির সিজার ডেলিভারি হচ্ছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালগুলো প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাড়াচ্ছে সিজারিয়ান ডেলিভারি চার্জ। ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো দেশে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রসব সিজারের মাধ্যমে হওয়া যৌক্তিক। এর বেশি হলে সেটি অপ্রয়োজনীয় সিজার হিসেবে গণ্য হয়।
জানা গেছে, ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালে সিজার করাতে খরচ হয় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। আজগর আলী হাসপাতালে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল লিমিটেডের খরচ ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এভারকেয়ার হাসপাতালে এক লাখ ৭৫ হাজার থেকে দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা। এদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে এক লাখ ১৫ হাজার থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।
স্কয়ার হাসপাতালে এক লাখ ৩১ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে হাই-রিস্ক সিজারের জন্য একই হাসপাতালের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। অপরদিকে বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেডে সিজার ডেলিভারির খরচের ক্ষেত্রে সেখানে ওয়ার্ডের জন্য খরচ ৭০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৯২ হাজার টাকা। আদ-দ্বীন হাসপাতালে ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের ওয়ার্ডের জন্য খরচ ২০ হাজার থেকে ৪৮ হাজার টাকা।
এসব হাসপাতালে কেবিন সুবিধা, এসি, নন-এসি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কমবেশি হওয়ার কারণে খরচ কমবেশি হয়ে থাকে। তবে এসব খরচ শুধু হাসপাতালের প্যাকেজ হিসেবে নির্ধারিত। ওষুধের খরচ আলাদাভাবে রোগীকেই বহন করতে হয়। তবে মেডিসিন সম্পূর্ণ রোগীকে বহন করতে হয়।
প্রথম দিকে গর্ভবতী মাকে নিয়মিত চেকআপে আশ্বস্ত করা হয় যে, সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু ডেলিভারির সময় যত ঘনিয়ে আসে, ততই বাড়তে থাকে নানা ধরনের ভয় দেখানোর পাঁয়তারা। এর মধ্যে অন্যতম হলো শিশুর অবস্থান উল্টো বা সঠিক জায়গায় না থাকার ফলে স্বাভাবিক প্রসবে ঝুঁকি থাকা। শিশুর মাথা বড় হয়ে যাওয়া, যা স্বাভাবিক প্রসবকে কঠিন করে তুলবে। অ্যামনিওটিক ফ্লুইড (পানি) কমে বা বেড়ে যাওয়া, যা শিশুর জীবনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া। রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, এতে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান, তাই সিজার ছাড়া উপায় নেই। ডায়াবেটিস বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে স্বাভাবিক প্রসব অসম্ভব। মায়ের বয়স বেশি বা খুব অল্প বয়স হওয়ায় প্রসব জটিল হতে পারে, তাই দ্রুত সিজার করা। শিশু শ্বাসরুদ্ধ হতে পারে বা গর্ভেই মারা যেতে পারে, যা পরিবারের ওপর আরও মানসিক চাপ তৈরি করে। অনেক ক্ষেত্রে আবার বলা হয়, প্রসব বেশি সময় নিলে জরায়ু ফেটে যেতে পারে, ফলে মা-শিশু দুজনেরই জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। সবশেষে বলা হয়, এখনই সিজার না করলে যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এমন ভয় ও আতঙ্কে পরিবারগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় এবং ডাক্তাররা সেই সুযোগেই অপ্রয়োজনীয় সিজার করিয়ে নেন। বাস্তবে এসব অজুহাত অনেক সময় চিকিৎসাগতভাবে যৌক্তিক নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ‘মেডিকেল ভয়’ সৃষ্টি করে গর্ভবতী নারীকে অস্ত্রোপচারে ঠেলে দেয়।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের এক ভুক্তভোগী শেয়ার বিজকে বলেন, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের নিয়মিত চেক-আপে চিকিৎসক বারবার আশ্বস্ত করেছিলেন, ‘সবকিছু স্বাভাবিক আছে, কোনো সমস্যা নেই।’ কিন্তু প্রেগন্যান্সির আট মাস পার হতেই হঠাৎ সেই চিকিৎসকের সুর বদলে যায়। তিনি পরিবারকে নানারকম ভীতি দেখাতে শুরু করেন, ‘আজকেই সিজার করতে হবে, নইলে মা-শিশু উভয়ের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।’ স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত পরিবার তখন চিকিৎসকের কথায় রাজি হয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে সিজার করা হলেও অপারেশনের পর ডাক্তারদের অসাবধানতার কারণে সেলাই ফাঁকা হয়ে যায় এবং রক্ত-পুঁজ বের হতে শুরু করে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই আবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নতুন করে অপারেশনের মুখোমুখি হতে হয়। এতে শুধু শারীরিক ভোগান্তিই নয়, ওই পরিবারের ওপর পড়ে বিশাল আর্থিক ও মানসিক চাপ।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আক্তার মিমি শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমান সময়ে অনেক মা-ই স্বেচ্ছায় সিজারিয়ান অপারেশনকে বেছে নিচ্ছেন। নরমাল ডেলিভারির ব্যথা বা ঝুঁকি নিতে অনেকেই আর আগ্রহী নন। অনেক সময় রোগীরাই আমাদের অনুরোধ করেন, ‘ম্যাডাম, আমরা সিজারিয়ান অপারেশন করাতে চাই।’
গবেষণা বলছে, সিজারের খরচ স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি। ফলে হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য অপ্রয়োজনীয় সিজার করাতে রোগীদের প্রভাবিত করছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মিফতা মালিহা শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে সিজারিয়ান অপারেশনের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, অনেক সময় চিকিৎসকরা হাসপাতাল মালিকের চাপে পড়ে রোগীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সিজার করান। এর পেছনে মূলত দেশের পুরো সিস্টেমই দায়ী, যেখানে জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার অভাব রয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে জঘন্যতম অপরাধের মধ্যে পড়ে, কারণ সিজারিয়ান অপারেশন এবং এর খরচ ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য। কোনো রোগী স্বাভাবিকভাবে সন্তান জš§ দিতে চাইলে তাকে ভয় দেখিয়ে সিজার করানো কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, তবে বর্তমান সময়ে আবার অনেক রোগী স্বেচ্ছায় সিজার করাতে চান। নরমাল ডেলিভারির চেয়ে সিজারকে তারা তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক ও নিরাপদ ভাবছেন। এখনকার রোগীরাও অনেকটা সচেতন ও স্মার্ট হয়ে গেছেন।
প্রসূতি মা, পরিবার ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সিজারের অপারেশন অনুযায়ী হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। পাশাপাশি অনেকটা চিকিৎসকরাই সিজারে প্রভাবিত করছেন। ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়াই সিজার করা হচ্ছে কেবল আর্থিক সুবিধার কারণে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার নীতিবিরুদ্ধ ও গর্হিত কাজ হলেও বাংলাদেশে এটি সীমা অতিক্রম করেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমান সিজারিয়ান হারের বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। তবে সঠিক গবেষণা ছাড়া নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন যে, আসলে কোনো কোনো কারণ এর জন্য দায়ী। তবে তিনি বলেন, এখন অনেক রোগীই নরমাল ডেলিভারির কষ্ট নিতে চান না। বরং তারা নিজেরাই সিজার করাতে আগ্রহী, কারণ এটি তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক একটি পদ্ধতি। বিশেষ করে অজ্ঞান না করেই অপারেশন সম্পন্ন করা যায়। তাছাড়া যমজ সন্তান জš§দানের ক্ষেত্রে সিজারকে প্রায় ঝুঁকিমুক্ত একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ধরা হয়, যেখানে সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সেখানে সিজারের হার অনেক কম। কারণ ভৌগোলিক কারণে তাদের বিস্তৃত জনপদে হাসপাতালের সংখ্যা খুবই সীমিত। হাসপাতাল দূরে থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাসাতেই নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। অপরদিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিসর ছোট হওয়ায় হাতের নাগালেই হাসপাতাল পাওয়া যায়। ফলে মানুষ এখন আর ঝুঁকি নিতে চান না।
সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে দেশে অপ্রয়োজনীয় সিজার হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার। একই বছরে প্রকাশিত Massive Boom of C-Section Delivery in Bangladesh : A Household Level Analysis 2004-2018 প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে ডেলিভারিতে ৬৫ শতাংশ খরচ রোগীর পকেট থেকে যায় এবং বেসরকারি হাসপাতালে খরচের ১০০ শতাংশ বহন করতে হয় রোগীকেই। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ সালে দেশে সিজারের হার দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে ও পাকিস্তানে এ হার ছিল ২২ শতাংশ, নেপালে ১৬ শতাংশ এবং মিয়ানমারে ১৭ শতাংশ। গ্রামে এ হার ছিল ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং শহরে ৪৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। অথচ ২০০৩-০৪ সালে এ হার ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তখন গ্রামে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং শহরে ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ সিজার হতো। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় সিজারের হারে বাংলাদেশ শীর্ষে উঠে আসে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট প্রসবের মধ্যে ৩১ শতাংশ হয়েছিল সিজারের মাধ্যমে। ওই বছর ৩৭ লাখ শিশুর মধ্যে ১৬ লাখ জš§ নেয় অস্ত্রোপচারে, যা মোট জন্মের ৪১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজারই ছিল অপ্রয়োজনীয় সিজার। এ হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত সীমার চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (BDHS-2022) জানায়, সার্বিক সিজারের হার ছিল ৪৫ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ডেলিভারিতে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ।
একই সময় বিবিএসের ‘Sample Vital Statistics 2022’ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকায় সিজারের হার ছিল ৫৮ দশমিক ২১ শতাংশ, পৌর ও অন্যান্য নগর এলাকায় ৫১ শতাংশ এবং গ্রামে ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সিজারে জš§ নেয়া শিশুদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ জন্ম নেয় বেসরকারি হাসপাতালে, ১৪ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে এবং মাত্র দুই শতাংশ এনজিও স্বাস্থ্যকেন্দে ।
২০২৩ সালের তথ্যে দেখা যায়, দেশে প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে দুটির জš§ হয় সিজারের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে সার্বিক সিজারের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ। শহরে এ হার পৌঁছে যায় ৫৯ দশমিক ১ শতাংশে, আর সরকারি হাসপাতালে তা ছিল মাত্র ২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের হার সর্বোচ্চ, যেখানে মোট ডেলিভারির ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয় সিজারের মাধ্যমে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৭ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশু প্রায় ২৮ শতাংশ এবং প্রতিবছর জš§ নেয় প্রায় ২৫-৩০ লাখ শিশু। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতি মিনিটে ৯টি শিশু জš§ নেয়, যা বছরে প্রায় ৪৭ লাখ ২০ হাজার। চলতি বছর কিছু হাসপাতালভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে এখন সিজারের হার ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। অনেক বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এ হার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত উঠে গেছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান একে আজাদ খান শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে সিজারিয়ান অপারেশনের হার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মুনাফার লোভ এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি অ্যাকাউন্টাবিলিটির অভাবও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এ কারণে সিজারের হার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
তবে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা সতর্ক করে বলেন, সিজারিয়ান অপারেশন একবার হলে দীর্ঘ মেয়াদে নারীর শরীরে এর নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। অপারেশনের সময় দেয়া ইনজেকশন ও অ্যানেস্থেশিয়া অনেকের শরীরে স্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে; যেমন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, সংক্রমণ, সেলাইয়ের জায়গায় ব্যথা, পরবর্তী সময়ে জরায়ু ও ডিম্বাশয়ে জটিলতা, এমনকি শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা। দীর্ঘদিন পরে অনেক নারী কোমর, হাড় ও স্নায়ুর সমস্যায় ভোগেন। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, একবার সিজার হলে পরবর্তী গর্ভধারণেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আর নরমাল ডেলিভারির সুযোগ থাকে না। জরায়ুতে সেলাইয়ের কারণে ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় চিকিৎসকেরা সাধারণত আবার অস্ত্রোপচারের পথই বেছে নেন।
ফলে একজন নারীর শরীর ও ভবিষ্যৎ মাতৃত্ব দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকির মুখে পড়লেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য এটি পরিণত হয় একটি লাভজনক ব্যবসায়। কারণ প্রতিটি সিজারের সঙ্গে যুক্ত থাকে উচ্চ ব্যয়ের প্যাকেজ, পুনর্ভর্তি, ওষুধপত্র ও অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ। অর্থাৎ একদিকে নারীরা বারবার অস্ত্রোপচার ও শারীরিক জটিলতার শিকার হন, অন্যদিকে হাসপাতাল মালিকরা সেই ভোগান্তিকে মূলধন করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেন।
অপ্রয়োজনীয় সিজারের এই প্রবণতা তাই কেবল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি নয়, বরং মাতৃত্বকে ঘিরে গড়ে ওঠা এক অমানবিক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

Discussion about this post