বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর গোটা খাতটি আস্থার সংকটে। আমাদের মনে আছে, জাতীয় দৈনিকগুলোয় বিজ্ঞাপন-ঝড় তুলেছিল জালিয়াতরা। প্রতিকারে নানা ব্যবস্থা নেয়া হলেও সুযোগসন্ধানীদের নিবৃত্ত করা যায়নি।
মিথ্যা তথ্যে পণ্য বিক্রিতে জেল ও জরিমানার নতুন অধ্যাদেশ বিধান করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তথ্যমতে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে অনলাইন বিক্রেতাকে দুই বছরের কারাদণ্ড, অনাদায়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে পণ্য বা সেবা সরবরাহ না করলে মূল্যের কয়েক গুণ জরিমানা আরোপ করা হবে। নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও থাকছে বড় অঙ্কের জরিমানার বিধান।
এমন সব বিষয় যুক্ত করে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ জারি এবং তা যথানিয়মে পরিপালিত হলে অনলাইন ব্যবসায় প্রতারণা কমবে বলে আশা করা যায়। সাবেক সরকারও এর আগে ই-কমার্স খাতে গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে। দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান শত শত কোটি টাকা আত্মসাতসহ গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
শুরুতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে ‘অস্বাভাবিক’ সব অফার দেয়। পরে দেখা যায় যে অগ্রিম অর্থ নিলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করছে না। অন্যদিকে পণ্য সরবরাহকারী বা মার্চেন্টরা বলছেন, দিনের পর দিন তাদের বকেয়া অপরিশোধিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে এ অর্থ আটকে থাকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহক বা মার্চেন্টদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই রাখেনি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। শুরুর দিকে এক ধরনের ডিসকাউন্ট/সাইক্লোন অফার চালু করে ২০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক দেয়া হবে বলে বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হয়। অর্থাৎ ১০০ শতাংশ অফারে কোনো পণ্য কেনা মানে গ্রাহক মূল টাকাও ফেরত পাবেন, আবার পণ্যও পাবেন। এমন অবিশ্বাস্য অফার পেয়ে লাখ লাখ গ্রাহক ওই ই-কমার্স সাইটগুলোয় পণ্য অর্ডার করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
প্রথম দিকে তারা কিছু গ্রাহকের কাছে পণ্য সরবরাহ করলেও কয়েকদিনের মাথায় বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়েও যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ, সেইসঙ্গে মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধে টালবাহানা শুরু করে।
সরকারি নির্দেশিকায় প্রধানত পণ্য সরবরাহ ও রিফান্ড দেয়ার সময় বেঁধে দেয়া হয়। তবে নীতিমালা ভঙ্গ করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যেমন কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করা। কিন্তু নীতিমালা ভঙ্গ করলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সেসব এখন অতীত। কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিয়ে দেশে ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না। অধ্যাদেশ পাসের পর প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ তদারকি করলে গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারী সব অংশীজনই স্বস্তি পাবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।