শেয়ার বিজ ডেস্ক : ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা ভাতের জন্য শনিবার গাজার একটি দাতব্য রান্নাঘরে হাঁড়ি ও প্লাস্টিকের বালতি হাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এর এক দিন আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত এ ভূখণ্ডে জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে। খবর: এএফপি।
এএফপির ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, নারী ও শিশুরা ভিড় করে খাবারের জন্য চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। ইসরাইল এই শহরকেই তাদের সম্প্রসারিত সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে দখলের পরিকল্পনা করছে।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এক কিশোর বড় একটি হাঁড়ির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে কিছু অবশিষ্ট ভাত কুড়িয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে এক কিশোরী তাঁবুর পাশে বসে মাটিতে রাখা প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে ভাত খাচ্ছে।
জাতিসংঘ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, টানা ২২ মাসের যুদ্ধে ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে গাজায় ত্রাণ সহায়তা ঢুকতে না দেয়ায় সেখানে দুর্ভিক্ষ হয়েছে।
এএফপির ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, গাজার জেইতুন জেলার আকাশে যখন ঘন ধোঁয়া উড়ছে তখন ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এদিকে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, সাবরা ও জেইতুন এলাকার অবস্থা ‘একেবারেই ভয়াবহ’। তার ভাষায়, ‘সেখানে পুরো আবাসিক ব্লক মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।’
জেইতুনের উত্তর প্রান্তে বাস্তুচ্যুত আহমাদ জুনদিয়েহ (৩৫) বলেন, ‘আমরা এখানে আটকে আছি, ভয়ে বাস করছি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। গাজায় কোথাও নিরাপত্তা নেই। এখন চলাফেরা করা মানেই মৃত্যু।’
তিনি এএফপিকে ফোনে বলেন, ‘আমরা সবসময় বোমা ফাটার শব্দ শুনি, যুদ্ধবিমান, কামানের গোলা এবং এমনকি ড্রোন বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পাই। আমরা ভীষণ আতঙ্কিত, মনে হচ্ছে শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে।’
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ শুক্রবার হুঁশিয়ারি দেন, হামাস যদি নিরস্ত্র না হয়, জিম্মিদের মুক্তি না দেয় এবং ইসরাইলের শর্তে যুদ্ধ শেষ না করে, তবে ইসরাইল গাজা শহরকে ধ্বংস করে দেবে। গাজার বাসিন্দারা জানান, এই এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে ইসরাইলি হামলা অবিরামভাবে চলছে।
গাজার বাসিন্দা ৫৩ বছর বয়সী আইমেন দালুল, যার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, তিনি বলেন, ‘ওরা আসুক আর নিজের চোখে দেখুক জেইতুনে কী ঘটছে। আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘দরকারে আমরা গবাদিপশুর মতো রাস্তায় ঘুমাব তবু আমাদের প্রতি দয়া করুন।’
২৪ বছর বয়সী মাহমুদ আবু সাকের বলেন, ইসরাইল গাজা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই লোকজন দ্রুত এলাকা ছাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আজ সকালে ৫০০ থেকে ৬০০-এর বেশি পরিবার চলে গেছে এবং গতকাল হাজার হাজার মানুষ চলে গেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সকাল থেকে বিস্ফোরণের শব্দ সবাইকে পালাতে বাধ্য করছে।’