প্রতিনিধি, কলাপাড়া, পটুয়াখালী: সাগরের অব্যাহত ভাঙনে লন্ডভন্ড কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল শনিবার বেলা ১১ টায় কুয়াকাটা সৈকতে মানববন্ধন সমাবেশ করা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুয়াকাটা পৌরশাখা, ট্যুর অপারেটর আ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক), কুয়াকাটা ট্যুর গাইড আ্যসোসিয়েশন, কুয়াকাটা বয়েস ক্লাব, কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, কুয়াকাটা হোটেল মোটেল এমপ্লয়িজ আ্যসোসিয়েশন, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
বাঁচাও কুয়াকাটা, বাঁচাও পর্যটন, স্লোগানের মধ্য দিয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জামায়াত নেতা মাওলানা মাঈনুল ইসলাম মান্নান, কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার, কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান হাওলাদার, কুয়াকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান, প্রকৌশলী নিহার রঞ্জন মন্ডল প্রমুখ। বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সাগরের ভাঙনের কবল থেকে পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা সৈকত
রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টায় প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানান। নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ্য কুয়াকাটা কে বাঁচাতে না পারলে দেশের পর্যটন শিল্পের অপুরনীয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বক্তারা।
প্রসঙ্গত নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে গত শুক্রবার কুয়াকাটা সৈকত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। উত্তাল ঢেউ দীর্ঘ সময় ধরে সৈকত লাগোয়া শোরলাইনে ধ্বংসের তান্ডব চালায়। আগেই অনেকটা বিধ্বস্তদশার নির্মানাধীন ১৩০০ মিটার দীর্ঘ সড়কটির ফুটপাত তছনছ হয়ে যায়।
সৈকতের শুন্যপয়েন্ট থেকে দুইদিকের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে এখন শুধু ধ্বংসের ছাপ পড়ে আছে। কংক্রিটের ভগ্নাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। সৈকত লাগোয়া দোকানিরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ভাঙনের তান্ডব দেখে কুয়াকাটার ব্যবসায়ী, লগ্নিকারকসহ সেখানকার সকল শ্রেনিপেশার মানুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
সৈকত লাগোয়া মসজিদ, মন্দির, ট্যুরিজম পার্কসহ ছোট বড় স্থাপনার মালিকরা আজকের সাগরের উম্মাদনায় চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এদিকে কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন রোধে এবছর জরুরি কোন প্রটেকশন দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। তার উপরে ভাঙনরোধে সৈকত রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প ঝুলে আছে অনিশ্চয়তায়। প্রায় দুই যুগ ধরে মুখ থুবড়ে আছে। ফলে এখানকার লগ্নিকারকরা চরম উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন।
কুয়াকাটার ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ গতকাল শনিবার (২৬ জুলাই) মানববন্ধন সমাবেশ করেন। পর্যটন ও পরিবেশ উন্নয়ন কর্মী কেএম বাচ্চু বলেন, ‘আজকের কুয়াকাটার ভাঙন দেখে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সভাপতি ও ট্যুর অপারেটর আ্যসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ‘ এই মুহুর্তে দেশের স্বার্থে, জাতীয় স্বার্থে তথা কুয়াকাটার স্বার্থে জরুরি প্রটেকশনসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়াস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহআলম বলেন, ‘ অস্বাভাবিক জোয়ারের ঢেউয়ে কুয়াকাটা সৈকতের শোরলাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মহোদয় জানিয়েছেন। আজ পরিদর্শন করে ট্যুরিজম পার্ক থেকে শুন্য পয়েন্ট পর্যন্ত জিওব্যাগ জিওটিউব দিয়ে প্রটেকশনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ইয়াসীন সাদেক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডেও সঙ্গে সমন্বয় করে পৌরসভার থেকেও কিছু ফান্ডিং কওে যৌথভাবে দ্রুততম সময়ে অন্তত ট্যুরিজম পার্ক (ডিসি পার্ক) থেকে শুণ্যপয়েন্ট পর্যন্ত জরুরি প্রটেকশনের উদ্যোগ নিবেন।
আরআর/