Print Date & Time : 25 November 2025 Tuesday 12:53 pm

আইপিও নীতিমালা বিনিয়োগবান্ধব করতে কোটা ঢেলে সাজান

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ বিবেচনা করে একটি বিনিয়োগবান্ধব ‘আইপিও নীতিমালা’ করার আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ ও প্রবাসী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

‘পাবলিক অফার অব ইকুইটি সিকিউরিটিজ রুলস-২০২৫’-এর খসড়ার ২২তম পৃষ্ঠায় আইপিওর শেয়ার বরাদ্দের কোটাকে বিনিয়োগবান্ধব মনে করছেন না তারা।

সম্প্র্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর এমন মতামত পাঠিয়েছে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। গত ৩০ অক্টোবর খসড়া সম্পর্কিত মতামতের আহ্বান করে বিএসইসি।

খসড়ায় দেখা যায়, মোট আইপিও শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবে Fixed price Method HI-30%+MF-20%-50% Ges Book Building Method & EI-40%+MF-20%-60% কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যেখানে পূর্বে Fixed price Method wQj EI-CIS-20%+MF-5%-25% এবং Book Building Method G wQj EI+MF+CIS-25% কোটা।

এই পদ্ধতিতে আইপিও কোটার প্রায় সিংহ ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে চলে যায়। অথচ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা তেমন বেশি না। যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৬ লাখেরও বেশি। তাদের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ফিক্সড প্রাইজ মেথডে ৩৫ শতাংশ কোটা এবং বুক বিল্ডিং মেথডে ২৫ শতাংশ কোটা।

‘অন্যান্য’ কোটা বলতে যদি আরবি (RB) বোঝায়, তা আগে ছিল ৭০ শতাংশ। তাহলে দেখা যায় এই কোটা আগের কোটার অর্ধেকেরও কম। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বৈষ্যমের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করছেন তারা।

এ ক্ষেত্রে খসড়ার ওপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে মতামতে বলা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও মিউচুয়াল ফান্ডের (এমএফ) কোটা কমিয়ে দিয়ে ‘অন্যান্য’ ৬০ শতাংশ এবং ননরেসিডেন্ট (NR) ছাড়া শুধু এনআরবি ১০ শতাংশ কোটায় উন্নীত করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।

মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে আগে যেখানে ৫ শতাংশ কোটা  বরাদ্দ ছিল, তা বর্তমানে বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাবনায় রেখেছে বিএসইসি। এই প্রস্তাবকে বিনিয়োগবান্ধব মনে করছেন না অনেকেই।

তারা বলছেন, মিউচুয়াল ফান্ড মার্কেটে কোনো ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে না। তারা এ খাতের জন্য আগের মতো ৫ শতাংশ কোটাই বরাদ্দ রাখার দাবি জানান।

খসড়ার ২২নং পৃষ্ঠায় দেয়া হয় দুই ক্যাটেগরিসহ NRB + NR= 5% কোটা। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আলাদা কোনো অবস্থান থাকে না বলে মনে করছেন প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলছেন, আইপিওতে নন-রেসিডেন্টদের না রাখাই ভালো। তারা মূল মার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারে। আগেও শুধু এনআরবিদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল (২০২০ পর্যন্ত)।

জানা গেছে, ২০২১ সালের মে মাসের পরে আগের মতো বৈদেশিক মুদ্রা আসছে না। এর প্রধান কারণ হলো আইপিওতে এনআরবি কোটা ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করা। এসব কারণে দিন দিন প্রবাসীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। এফসি অ্যাকাউন্টে ডলার পাঠালে প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত হন তারা।

তাদের ধারণা, আইপিওতে কেবল এনআরবির জন্য আলাদা করে ১০ শতাংশ কোটা রাখা হলে বিদেশি মুদ্রা আসা বাড়বে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এইচএনআই (HNI) কোটায় শেয়ার বরাদ্দ রাখার অর্থ হলো তেলের মাথায় তেল দেয়ার মতো। বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার মার্কেট থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা/ঋণ ইত্যাদি পেয়ে থাকেন। তাই এই কোটা প্রত্যাহার করার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বলছেন, আইপিওর কোটা বরাদ্দ হওয়া উচিত Others (RB)=60% + NRB=10%+ EI-20% + MF-5% + Employee=5% ।

তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানি সরাসরি তালিকাভুক্ত হলে শুধু কোম্পানিই লাভবান হবেন। আর আইপিও আকারে এলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।

তারা চান, সরকারি ও বহুজাতিক সব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে হলে যাতে ফিক্সড প্রাইস মেথড বা বুক বিল্ডিং মেথড উভয় ক্ষেত্রে যেন আইপিও আকারে মার্কেটে আসে। প্রো-রাটা বেসিস পদ্ধতিতে বরাদ্দ না দিয়ে লটভিত্তিক লটারির মাধ্যমে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও মতামত দেন তারা।

খসড়ায় আইপিওর আবেদন প্রক্রিয়া কী হবে তা জানানো হয়নি। টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রকাশিত খসড়ায় এ ব্যাপারে কিছু দিকনির্দেশনা ছিল।

বিনিয়োগকারীদের দাবি, আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ‘শেয়ার বাই’ নিয়ম যেন না থাকে। তারা প্রত্যেক আইপিও থেকে ২০০-৩০০ টাকা মুনাফা করে থাকে। অন্যদিকে ‘শেয়ার বাই’ করে লোকসান করে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। শেয়ার কিনে লোকসান দিতে দিতে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ পুনরায় আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে এই নিয়মটি যেন চালু না করা হয়।