Print Date & Time : 3 December 2025 Wednesday 4:05 pm

আগামী সপ্তাহে  আসছে নতুন ব্যাংক : গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, গভীর কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের আর্থিক খাত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক খাত ব্যবস্থাপনা এবং শাসনব্যবস্থা সংস্কারে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করছে। এ সময় দুর্বল পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে ৩৫ হাজার কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের কথাও জানান তিনি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন: অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দেশের পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে নতুন যে ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে সে প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। নতুন ব্যাংকটি আগামী সপ্তাহেই যাত্রা শুরু করতে পারে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন গভর্নর।

অর্থনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার শিরোনামে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে দৈনিক বণিক বার্তা।

উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) সভাপতি ও জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন।

সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ও শক্তিশালী ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ব্যবহার করে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহেই নতুন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করবে।

অনুষ্ঠানে আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন ব্যাংকটিতে থাকবে ৩৫ হাজার কোটি টাকার পেইড-আপ ক্যাপিটাল। এটি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ মূলধন মাত্র ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো। সরকার নতুন এই ব্যাংকে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে।

গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর পূর্বশর্ত হিসেবে বিনিময় হার সফলভাবে স্থিতিশীল করা হয়েছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ১২০ থেকে ১২২ দশমিক ৫০ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে, যেখানে অনেক আঞ্চলিক মুদ্রার অবমূল্যায়ন আরও বেশি হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কোনো হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতেই হার নির্ধারিত হচ্ছে।

মনসুর জানান, পূর্বে বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়া বিদেশি ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে এসেছে এবং বৈদেশিক পরিশোধ বকেয়া সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে। চলতি হিসাবের ঘাটতি উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে এবং আর্থিক হিসাব সামান্য ইতিবাচক অবস্থানে গেছে। আমাদের বৈদেশিক খাত স্থিতিশীল এবং ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

ব্যাংক খাতে ডলার সংকট নেই উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, সব ধরনের আমদানি মার্জিন শর্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি জানান, রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ইতোমধ্যে এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানির পরিমাণ গত অর্থবছরে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরও দ্বি-অঙ্কের প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।

তবে উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণকে (এনপিএল) গভর্নর বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। নতুন শ্রেণিবিন্যাস নীতি ও হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী এনপিএল হার প্রায় ৩৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে জানান তিনি। এ সমস্যা সমাধানে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে বলেও মন্তব্য করেন গভর্নর।

তিনি আরও বলেন, কাক্সিক্ষত মাত্রায় মূল্যস্ফীতি না কমায় সুদের হার এখনও উচ্চমাত্রায় রয়েছে। আমানতের হার ইতোমধ্যেই প্রায় ১০ শতাংশে পৌঁছেছে এবং ইতিবাচক প্রকৃত রিটার্ন নিশ্চিত করতে তা আরও বাড়তে পারে।

গভীর কাঠামোগত দুর্বলতার দিক ইঙ্গিত করে গভর্নর বলেন, শক্তিশালী বন্ড মার্কেটের অভাব, দুর্বল পুঁজিবাজার ও দুর্বল বিমা খাতের কারণে বাংলাদেশের আর্থিক খাত অতিমাত্রায় ব্যাংকনির্ভর হয়ে আছে।

দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য কেবল ব্যাংকের ওপর নির্ভর না করে বন্ড বাজারকে কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গভর্নর ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনসহ ইসলামী ব্যাংকের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুশাসন জোরদার করতে বড় ধরনের সংস্কারের কথা তুলে ধরেন।

মূল নিয়ন্ত্রক সংস্কারের মধ্যে রয়েছে- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন, ব্যাংকের বোর্ডে স্বাধীন পরিচালক সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীতকরণ, পারিবারিক মালিকানা ১০ শতাংশে সীমাবদ্ধ করা, আমানত বিমা স্কিম শক্তিশালী করা (কাভারেজ বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা), দেউলিয়া আইন আধুনিকায়ন এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন।

তিনি বলেন, পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে ৩৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনসহ একটি নতুন শক্তিশালী ব্যাংক গঠন করা হবে। পাশাপাশি ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, পরবর্তী সরকার একটি শক্তিশালী এবং আরও স্থিতিশীল আর্থিক খাত গড়ে তোলার জন্য এই সংস্কারগুলো অব্যাহত রাখবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. এ কে এনামুল হক বলেন, ব্যাপক বেকারত্বই গণ-অভ্যুত্থানের মূল কারণ। তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি অর্থনীতির মৌলিক অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।