শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২১ ভাদ্র ১৪৩২ | ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭
  • ♦ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শেয়ার বিজ
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ
➔ ই-পেপার
No Result
View All Result
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ
No Result
View All Result
শেয়ার বিজ
No Result
View All Result

আফ্রিকায় ঔপনিবেশিকতা থেকে নব্য ঔপনিবেশিকতা

Share Biz News Share Biz News
শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫.১২:০১ পূর্বাহ্ণ
বিভাগ - পত্রিকা, সম্পাদকীয় ➔ প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন
A A
আফ্রিকায় ঔপনিবেশিকতা থেকে নব্য ঔপনিবেশিকতা
0
VIEWS
Share on FacebookShare on TwitterShare on Linkedin

আনোয়ারুল ইসলাম : ​পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ আফ্রিকার নাম শুনলেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে বিশাল সাভানা, বন্যপ্রাণী, ঘন জঙ্গল আর রুক্ষ মরুভূমির ছবি। কিন্তু এই মহাদেশের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও একটি গভীর এবং যন্ত্রণাদায়ক শব্দ: ‘উপনিবেশবাদ’। শত শত বছর ধরে বহিরাগত শক্তির শোষণ ও শাসনের নির্মম ইতিহাস বহন করছে আফ্রিকার প্রতিটি ধূলিকণা। উপনিবেশবাদের জাঁতাকল থেকে মুক্ত হয়েও আজ সেই মহাদেশ নব্য-উপনিবেশবাদের এক অদৃশ্য শিকলে বন্দি।

ইউরোপীয়দের আগমনের আগে আফ্রিকা কোনো পিছিয়ে পড়া মহাদেশ ছিল না। উল্টো, এটি ছিল জ্ঞান, সংস্কৃতি, বাণিজ্য এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল। পশ্চিম আফ্রিকার মালির সমৃদ্ধ মাণ্ডিঙ্গা সাম্রাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কযুক্ত আকসুম রাজ্য, বা মরক্কোর ফেজ ও মালির টিম্বুকটুর মতো জ্ঞান ও সংস্কৃতির কেন্দ্রগুলো ছিল তার উজ্জ্বল উদাহরণ। টিম্বুকটুতে স্থাপিত শানকেরে বিশ্ববিদ্যালয় একসময় মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। আফ্রিকার এই সমৃদ্ধ ইতিহাস প্রায়ই ঔপনিবেশিক প্রচারণার আড়ালে চাপা পড়ে থাকে, যা আফ্রিকাকে ‘অসভ্য’ মহাদেশ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করত।

পঞ্চদশ শতকে পর্তুগিজ নাবিকদের মাধ্যমে সমুদ্রপথে আগমনের পর থেকে আফ্রিকার ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। প্রথমত, দাসপ্রথা। পর্তুগিজরা দাস বাণিজ্য শুরু করলেও, সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে ব্রিটিশ, ফরাসি, স্প্যানিশ এবং ডাচরাও এতে জড়িয়ে পড়ে। ১৬০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে, ট্র‍্যান্স-আটলান্টিক দাসপ্রথার শিকার হয়ে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ আফ্রিকানকে জোর করে আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দাসপ্রথা শুধু মানবতাকেই লাঞ্ছিত করেনি, আফ্রিকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডও ভেঙে দিয়েছিল। তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে জোর করে সরিয়ে নেয়ায় বহু সাম্রাজ্য ও রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে, কৃষি উৎপাদন কমে যায় এবং সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। এই বিশাল মানবসম্পদ হারানোর ক্ষতি আফ্রিকা শত শত বছরেও পূরণ করতে পারেনি।

উনিশ শতকের শেষের দিকে এক নতুন খেলা— ‘Scramble for Africa’ বা ‘আফ্রিকার জন্য হানাহানি’। ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর তাদের নতুন করে কাঁচামাল (রাবার, তুলা, খনিজ পদার্থ) এবং উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য নতুন বাজারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর সমাধান হিসেবে তারা আফ্রিকার বিশাল সম্পদকে নিজেদের কব্জায় আনার পরিকল্পনা করে। ১৮৮৪ সালে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এক কুখ্যাত সম্মেলন শুরু হয়, যা চলে ১৮৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সম্মেলনে আফ্রিকার কোনো নেতা বা প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না, অথচ ইউরোপের ১৪টি দেশ একটি ছুরি দিয়ে কেকের মতো মহাদেশটিকে ভাগ করে নেয়। এর ফলে জন্ম নেয় কৃত্রিম রাষ্ট্রসীমানা, যা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে একই পতাকার নিচে অথবা বিভক্ত করে দেয়। বেলজিয়ামের রাজা লিওপোল্ড দ্বিতীয়ের অধীনে কঙ্গো ফ্রি স্টেটে (১৮৮৫-১৯০৮) রাবার চাষের জন্য যে অমানবিক শোষণ ও গণহত্যা চালানো হয়েছিল, তা মানব ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়ে প্রায় ১ কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল। এই গণহত্যা ছিল এতই ভয়াবহ যে ১৯০৮ সালে বেলজিয়াম সরকার নিজেই রাজার হাত থেকে কঙ্গোর শাসনভার কেড়ে নিতে বাধ্য হয়।

​ঔপনিবেশিক শাসনের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই— শোষণ। সম্পদ, খনিজ পদার্থ (হীরা, সোনা, ইউরেনিয়াম), মূল্যবান কাঠ, কৃষি পণ্য— সবকিছুই ইউরোপের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। রাজনৈতিকভাবে, তারা আফ্রিকাকে শাসন করার জন্য ‘divide and rule’ নীতি প্রয়োগ করে, যা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ ও সংঘাতের জন্ম দেয়। রুয়ান্ডাতে হুঁতি এবং তুৎসি জাতির মধ্যে যে বিভেদ তৈরি হয়েছিল, তা ঔপনিবেশিক শাসনেরই ফসল, যা ১৯৯৪ সালের ভয়াবহ গণহত্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা অবকাঠামোর যেটুকু উন্নতি হয়েছিল, তার প্রধান লক্ষ্য ছিল ঔপনিবেশিক প্রশাসন ও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজ করা, সাধারণ জনগণের কল্যাণ নয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে জনমত জোরদার হয়। ইউরোপীয় শক্তিগুলো যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং তাদের পক্ষে দূরবর্তী উপনিবেশগুলো ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আফ্রিকার মানুষের মধ্যেও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়। ১৯৪৫ সালের পর থেকে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন গতি পায়। Kwame Nkrumah-এর নেতৃত্বে ঘানা ১৯৫৭ সালে প্রথম সাব-সাহারান আফ্রিকান দেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। তার আলোচিত স্লোগান ছিল: “Seek ye first the political kingdom, and all else shall be added unto you.”। এরপর ১৯৬০ সালে (‘আফ্রিকার বছর’ নামে পরিচিত) ১৭টি আফ্রিকান দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এই স্বাধীনতা অর্জন সহজ ছিল না। অনেক দেশে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে হয়েছে, যেমন- আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ (১৯৫৪-১৯৬২)। ​কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পরই আফ্রিকান দেশগুলো এক নতুন সংকটে পড়ে। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো তাদের প্রস্থানের আগে এমন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো রেখে গিয়েছিল, যা ছিল দুর্বল এবং ভঙ্গুর। কোনো দেশেই দক্ষ প্রশাসন বা অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ছিল না। কৃত্রিম সীমানার কারণে প্রায়ই জাতিগত সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠত, যা সামরিক অভ্যুত্থান ও গৃহযুদ্ধের জন্ম দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চলা নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ, যা Biafran War নামেও পরিচিত, কেড়ে নিয়েছিল প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রাণ।

​উপনিবেশবাদের সরাসরি সামরিক শাসন শেষ হলেও, তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে যায়। এই অবস্থাই ‘নব্য-উপনিবেশবাদ’ নামে পরিচিত। নব্য-উপনিবেশবাদ হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে একটি রাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন হলেও অর্থনৈতিকভাবে অন্য কোনো পরাশক্তির ওপর নির্ভরশীল থাকে।

ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো আর সরাসরি দেশ শাসন না করলেও, তারা আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো, যেমন- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। এই সংস্থাগুলো ঋণ দেওয়ার সময় কঠোর শর্ত জুড়ে দেয়, যা ‘Structural Adjustment Programs’ (SAPs) নামে পরিচিত। এই শর্তগুলো প্রায়ই রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো বেসরকারীকরণ, ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং আমদানির ওপর কর কমানোর মতো বিষয়গুলোকে বাধ্যতামূলক করে। ফলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয় এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য বাজার উন্মুক্ত হয়ে যায়। আফ্রিকান দেশগুলো আজও প্রধানত কাঁচামাল রপ্তানিকারক এবং উৎপাদিত পণ্য আমদানিকারক, যা তাদের বাণিজ্য ঘাটতিকে বাড়িয়ে তোলে। আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলার, যা এই অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার একটি স্পষ্ট চিত্র।

পরাশক্তিগুলো প্রায়ই নিজেদের স্বার্থে দুর্বল বা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সমর্থন করে। তাদের লক্ষ্য থাকে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা, যা বিদেশি কোম্পানির জন্য খনিজসম্পদ বা কৃষিজমির অবাধ ব্যবহার নিশ্চিত করবে। উদাহরণস্বরূপ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (Democratic Republic of Congo) যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলে, তার পেছনে প্রধান কারণ হলো বিদেশি কোম্পানিগুলোর খনিজসম্পদ (কোবাল্ট, তামা) আহরণের স্বার্থ। ফ্রাঙ্কোফোনে আফ্রিকান দেশগুলোয় ফ্রান্সের গোপন রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব এখনও বিদ্যমান। ফ্রান্স প্রায়ই তার সাবেক উপনিবেশগুলোতে সামরিক হস্তক্ষেপ করে, যা সেখানে ফরাসি-বান্ধব সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য করে।

পরোক্ষ সামরিক উপস্থিতি বা সহায়তা, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, সাহেল অঞ্চলে ফরাসি বা আমেরিকান সামরিক উপস্থিতি জঙ্গিবাদ দমনের নামে প্রায়ই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে। এই সামরিক উপস্থিতি দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে নব্য-উপনিবেশবাদের চিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। পুরোনো শক্তিগুলোর পাশাপাশি নতুন পরাশক্তি, বিশেষ করে চীন, রাশিয়া ও ভারত, আফ্রিকার ভূ-রাজনৈতিক খেলায় অংশ নিচ্ছে।

চীন আফ্রিকায় সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে। তারা বিশাল ঋণের বিনিময়ে রেললাইন, বন্দর, রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছে। চীনের Belt and Road Initiative-এর আওতায় কেনিয়ার মোমবাসা থেকে নাইরোবি পর্যন্ত বিশাল রেললাইন বা ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা থেকে জিবুতি পর্যন্ত রেললাইন এর অন্যতম উদাহরণ। চীন এই সম্পর্ককে ‘উইন-উইন’ বা জয়-জয় বলে অভিহিত করে, যেখানে উভয় পক্ষই উপকৃত হয়। কিন্তু সমালোচকরা এটিকে ‘ঋণের ফাঁদ’ বলে মনে করেন, যেখানে ঋণগ্রস্ত দেশগুলো ঋণ শোধ করতে না পারলে নিজেদের সম্পদ হারাতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীন আফ্রিকায় প্রায় ১৫৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, যা আফ্রিকান দেশগুলোর ঋণের বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

রাশিয়া সামরিক শক্তি, অস্ত্র বিক্রি এবং বিভিন্ন দেশে ভাড়াটে সৈন্য (যেমন- ওয়াগনার গ্রুপ) পাঠিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে। সাম্প্র্রতিক সময়ে মালিসহ কয়েকটি দেশে ফরাসি প্রভাব কমাতে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর বিনিময়ে তারা খনিজ সম্পদ আহরণের সুযোগ পায়। রাশিয়া প্রায়শই আফ্রিকান দেশগুলোর বর্তমান সরকারকে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তারা এখনও মানবিক সহায়তা, বাণিজ্য চুক্তি এবং সামরিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রভাব বজায় রেখেছে। তবে এখন তাদের কৌশল আরও কৌশলী ও সফট পাওয়ার-নির্ভর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘African Growth and Opportunity Act’ (AGOA)-এর মতো বাণিজ্য চুক্তিগুলো আফ্রিকান দেশগুলোকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির সুযোগ দেয়। তবে এই সুবিধাগুলো নির্দিষ্ট কিছু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিভিন্ন সাহায্য ও বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বজায় রেখেছে।

​আফ্রিকার ইতিহাসে সামরিক অভ্যুত্থান, গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার গল্প থাকলেও, কিছু দেশ গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সফলতার উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

​বতসোয়ানা দেশটি প্রায়ই একটি সফল আফ্রিকান গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৬৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বতসোয়ানা একটি স্থিতিশীল, বহু দলীয় গণতন্ত্র বজায় রেখেছে। দেশটি তার হীরার খনি থেকে প্রাপ্ত আয় বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনা করেছে এবং তা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করেছে। Transparency International-এর সূচকে এটি আফ্রিকার অন্যতম কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।

​স্বাধীনতা লাভ করার পর ঘানাও বেশ কয়েকবার সামরিক অভ্যুত্থানের শিকার হয়েছিল। তবে ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে দেশটি একটি স্থিতিশীল বহু-দলীয় গণতন্ত্রের দিকে ফিরে আসে। নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর এবং শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা ঘানাকে পশ্চিম আফ্রিকার একটি অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশটির অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও প্রশংসনীয়।

তাছাড়া সেনেগালকে প্রায়শই পশ্চিম আফ্রিকার একটি গণতান্ত্রিক বাতিঘর হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশটি তার স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কখনও কোনো সামরিক অভ্যুত্থানের শিকার হয়নি এবং নিয়মিতভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করে আসছে। ক্ষমতা হস্তান্তরও এখানে শান্তিপূর্ণভাবেই হয়ে থাকে, যা আফ্রিকার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ।

এই দেশগুলোর সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক নেতৃত্ব, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের অংশগ্রহণ থাকলে আফ্রিকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। এই সাফল্যগুলো শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তা প্রতিফলিত হয়েছে।

​বর্তমান অবস্থা, সুফল-কুফল ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা ​আজকের আফ্রিকা এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে মহাদেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি বৈষম্যপূর্ণ, যা দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং অসমতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হবে আফ্রিকান। এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী যদি সঠিকভাবে শিক্ষিত ও কর্মক্ষম হতে পারে, তবে তা মহাদেশের জন্য একটি বিশাল সম্পদ।  মোবাইল ব্যাংকিং, ফিনটেক ও তথ্যপ্রযুক্তিতে আফ্রিকার অনেক দেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এই প্রযুক্তিগুলো সনাতনী কাঠামোগুলোকে বাইপাস করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থাগুলো ধীরে ধীরে নিজেদের ক্ষমতা ও ভূমিকা বৃদ্ধি করছে। ​

​অনেক আফ্রিকান দেশ এখনও স্থায়ী দুর্নীতি ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানের সমস্যায় ভুগছে, যা বিদেশি বিনিয়োগ এবং জনগণের আস্থা নষ্ট করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা, বন্যা এবং মরুভূমি বৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলো আফ্রিকার কৃষি অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। একদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অন্যদিকে নতুন পরাশক্তির কাছ থেকে নেয়া ঋণ অনেক দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঋণ শোধ করতে গিয়ে তারা নিজেদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

ঔপনিবেশিকতার সুফল ও কুফল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, ইতিহাসের নির্মম সত্য হলো, ফলে আফ্রিকান মহাদেশ তার নিজস্ব পথে চলতে পারেনি। নামমাত্র কিছু আধুনিক অবকাঠামো বা শিক্ষা ব্যবস্থার যেটুকু উন্নতি হয়েছিল, তার পেছনে ছিল শোষণ ও নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘ পরিকল্পনা। নব্য-উপনিবেশবাদ সেই শোষণের কৌশলকে আরও সূক্ষ্ম ও অদৃশ্য করে তুলেছে।

​আজকের আফ্রিকা এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে পরাশক্তিগুলোর স্বার্থের দ্বন্দ্ব, জাতিগত সংঘাত এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য; অন্যদিকে রয়েছে প্রযুক্তি, তরুণ জনসংখ্যা এবং নতুন করে জেগে ওঠার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। এই শৃঙ্খল ভাঙার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে আফ্রিকান দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, নিজেদের সম্পদকে নিজেদের উন্নয়নে ব্যবহার করতে হবে এবং বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। এই পথ সহজ নয়, বরং কাঁটায় ভরা। কিন্তু প্রতিটি সফল পদক্ষেপই মহাদেশটিকে একটি নতুন এবং সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে, আফ্রিকা আজ তার অদৃশ্য শিকল ভাঙার সংগ্রামে লিপ্ত।

শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন
Previous Post

ইউক্রেনে স্থল, নৌ ও আকাশপথে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত ২৬ দেশ

Next Post

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেয়া ঋণ যাচাইয়ের উদ্যোগ নিন

Related Posts

অতি মুনাফা লুটছে হাসপাতালগুলো
করপোরেট কর্নার

অতি মুনাফা লুটছে হাসপাতালগুলো

আরও ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক

আরও ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ
জাতীয়

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ

Next Post
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেয়া ঋণ  যাচাইয়ের উদ্যোগ নিন

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেয়া ঋণ যাচাইয়ের উদ্যোগ নিন

Discussion about this post

সর্বশেষ সংবাদ

অতি মুনাফা লুটছে হাসপাতালগুলো

অতি মুনাফা লুটছে হাসপাতালগুলো

আরও ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

আরও ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ

রিটকারীদের আদালতের দণ্ড, ইউসিবির বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক মামলা

রিটকারীদের আদালতের দণ্ড, ইউসিবির বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক মামলা

পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ সালমান-সায়ান-শিবলী

পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ সালমান-সায়ান-শিবলী




 

আর্কাইভ অনুসন্ধান

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 ১২৩৪৫৬
৭৮৯১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  

প্রকাশক ও সম্পাদক ✍ মীর মনিরুজ্জামান

তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৪৮

একটি শেয়ার বিজ প্রাইভেট লি. প্রতিষ্ঠান

(প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রয়োজন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে)

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়

বিএসইসি ভবন (১০ তলা) ॥ ১০২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ॥ ☎ 01720123162, 01768438776

  • ♦ বাংলা টেক্সট কনভার্টার

Copyright © 2025 Daily Share Biz All right reserved. Developed by WEBSBD.NET

No Result
View All Result
  • ☗
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারা বাংলা
  • পত্রিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
    • পুঁজিবাজার
    • সম্পাদকীয়
    • ফিচার
  • রাজনীতি
  • তথ্য-প্রযুক্তি
  • স্পোর্টস
  • বিনোদন
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য
  • অর্থ ও বাণিজ্য
    • করপোরেট কর্নার
    • মূল্য সংবেদনশীল তথ্য
  • ফটো গ্যালারি
  • পুরনো নিউজ

Copyright © 2025 Daily Share Biz All right reserved. Developed by WEBSBD.NET