শেয়ার বিজ ডেস্ক : আবারও জাপান থেকে সব ধরনের সামুদ্রিক খাদ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে এরই মধ্যে টোকিওকে জানানো হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে।
মূলত জাপানের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির এক মন্তব্যের জেরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। তিনি বলেছেন, চীন তাইওয়ানে হামলা করলে তা জাপানের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। সেক্ষেত্রে সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। তার এ মন্তব্যের পর দুদেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। চীন এরই মধ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে চীনা নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণ না করতে আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে চীন থেকে বিপুল পরিমাণে পর্যটন বুকিং বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কার কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা জাপানি অর্থনীতির পর্যবেক্ষকদের।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চীন-জাপান বৈরিতার কেন্দ্রে উঠে এলো সামুদ্রিক খাদ্য বাণিজ্য। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে প্রথম জাপান থেকে সব ধরনের জলজ খাদ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেয় চীন। ২০১১ সালে ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে ঘটে যাওয়া পারমাণবিক বিপর্যয়ের কারণে জাপানের ফুকুশিমা ও আশপাশের এলাকা থেকে সংগৃহীত সামুদ্রিক খাদ্য নিয়ে আগে থেকেই এক ধরনের উদ্বেগ ছিল চীনে। পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রক্রিয়াজাত বর্জ্য পানিতে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলে জাপান থেকে সামুদ্রিক খাদ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বেইজিং। দীর্ঘ আলোচনার পর কয়েক মাস আগেই এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর পর চলতি মাসেই প্রথম জাপানি সামুদ্রিক খাদ্যের চালান প্রবেশ করে চীনে। আমদানি পুরোদমে শুরু করার কয়েক দিনের মাথায়ই তা আবার বন্ধের ঘোষণা দিল বেইজিং।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ও কিয়োদো জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের কারণ হিসেবে রয়েছে ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানি সাগরে ফেলার প্রক্রিয়াটি নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত জাপানের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির এক মন্তব্যের জেরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। তিনি বলেছেন, চীন তাইওয়ানে হামলা করলে তা জাপানের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। সেক্ষেত্রে সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
তার এ মন্তব্যের পর দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। চীন এরই মধ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে চীনা নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণ না করতে আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে চীন থেকে বিপুল পরিমাণে পর্যটন বুকিং বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কার কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা জাপানি অর্থনীতির পর্যবেক্ষকদের।
এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতিতে জাপানি সামুদ্রিক খাদ্য চীনে রপ্তানি করা হলেও এর কোনো বাজার পাওয়া যাবে না। সানায়ে তাকাইচি যদি তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তাহলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘কঠোর ও দৃঢ়’ পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে চীন।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে চীনের পক্ষ থেকে জাপানকে সামুদ্রিক খাদ্য আমদানি বন্ধের বিষয়ে অবগত করা হলেও জাপানি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে তারা আনুষ্ঠানিক কোনো নোটিফিকেশান এখনো পায়নি। জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি মিনোরু কিহারা সাংবাদিকদের গতকাল বুধবার জানান, চীন সরকারের পক্ষ থেকে সামুদ্রিক খাদ্যে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো নোটিফিকেশন টোকিওকে দেওয়া হয়নি।
চীনের সরকার, কূটনীতিক ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে জাপান এরই মধ্যে দেশটিতে অবস্থানরত জাপানি নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা জারি করেছে। তাদের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি ভিড়যুক্ত এলাকা এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে দুই দেশের এ উত্তেজনা সহসা প্রশমনের কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। টোকিও বলেছে, সংসদে তাকাইচির বক্তব্য সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
চীনের পক্ষ থেকে গত জুনে জানানো হয়, দেশটিতে ৪৭টি জাপানি প্রিফেকচারের মধ্যে ১০টি বাদে বাকি সবগুলো থেকে সামুদ্রিক খাদ্য আমদানি আবার শুরু করা হবে। জাপানের কৃষিমন্ত্রী নরিকাজু সুজুকি জানান, এ ঘোষণার পর প্রায় ৭০০ জাপানি রপ্তানিকারক চীনে আবার রপ্তানি শুরু করার জন্য পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান।
একসময় জাপানের মোট সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানির এক-পঞ্চমাংশেরও বেশির গন্তব্য ছিল চীন। এ রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা দেশটির বাজার পুনরুদ্ধারের জন্য নানামুখী পরিকল্পনা করছিলেন। নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হওয়ার বিষয়টিকে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে চলমান এ উত্তেজনা জাপানের পর্যটন খাতে পণ্য বাণিজ্যের চেয়েও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, জাপানের মোট জিডিপির প্রায় সাত শতাংশজুড়ে রয়েছে পর্যটন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এটি ছিল জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। দেশটির সরকারি তথ্য বলছে, আগত জাপানে পর্যটন খাটে মোট বিদেশি আগমনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই আসে চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকং থেকে।
