Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 11:03 am

আবাসন খাত ঘিরে উঁকি দিচ্ছে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

রামিসা রাহমান : ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা ছিল প্রবল। বিশ্লেষকরা বলছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে লড়াই করতে হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত কিছু পরিসংখ্যান বলছে, এ অন্ধকার সময়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আশার আলো। বিশেষ করে আবাসন খাতের ব্যয় স্বাভাবিক হয়ে আসা এবং লন্ডনের বাইরের শহরগুলোর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিÑএই দুই পরিবর্তন অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। খবর দ্য ইকোনমিস্টের।

পত্রিকাটি বলছে, ব্রিটেনে বাড়ির উচ্চমূল্য দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ছিল। বিশেষ করে লন্ডনে, গড় আয় করা একজন নাগরিককে একটি বাড়ি কিনতে নিজের বাৎসরিক আয়ের প্রায় আট গুণ ব্যয় করতে হতো। তবে বর্তমানে সেই অনুপাত কিছুটা কমে ছয় গুণের নিচে নেমে এসেছে।

দরপতনের এই ধারা শুরু হয় ২০১৫ সালের পর থেকে, যখন ‘বাই-টু-লেট’ বাড়ির ওপর নতুন কর আরোপ হয়। এরপর আসে ব্রেক্সিট ভোট, কভিড-১৯ মহামারিতে ঘরে বসে কাজের (হোম অফিস) ব্যাপক প্রসার এবং বিদেশিদের কর সুবিধা কমানো এই সবই মিলিয়ে আবাসন বাজারে চাপ পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিবর্তন স্থায়ী হলে বাড়ি কেনা আরও সহজ হবে, যার প্রভাব পড়বে সামাজিক গতিশীলতা এবং শ্রমবাজারে।

গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই দরপতনের ফলে কোনো আর্থিক সংকট দেখা দেয়নি। অতীতে যেমন বাড়ির দাম কমলে ব্যাংকিং খাত কেঁপে উঠত, এবার তেমনটি হয়নি। বরং এটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলকে উপকৃত করতে শুরু করেছে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর সম্প্রতি যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, লন্ডনের বাইরের কিছু শহরে উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে গ্রেটার ম্যানচেস্টার অঞ্চলে ২০০৪ সালের পর থেকে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে লন্ডনের তুলনায় তিনগুণ বেশি। এখন এই অঞ্চলের কর্মক্ষমতা লন্ডনের তুলনায় মাত্র ৩৫ শতাংশ কম, যেখানে একসময় তা ছিল ৫০ শতাংশ।

এছাড়া রদারহ্যাম শহরেও বিশাল পরিবর্তন এসেছে। গবেষণা বলছে, ‘অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং রিসার্চ সেন্টার’-এর উপস্থিতি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এ ধরনের কেন্দ্রগুলো আধুনিক শিল্প ও গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

অবশ্যই যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে। বাজেট ঘাটতি, পেনশন ব্যবস্থার ভারসাম্যহীনতা, স্বাস্থ্যসেবা সংকট, কল্যাণ সংস্কারের স্থবিরতা এবং জটিল আবাসন নীতিমালাÑসবই একটি উন্নত অর্থনীতির সামনে বড় বাধা।

তবে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এসব সমস্যা সমাধানযোগ্য শুধু প্রয়োজন সাহসী নেতৃত্ব এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দেশটির অর্থনীতি এখনও এমন জায়গায় আছে, যেখান থেকে সঠিক পথে এগোলে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

যদিও মিডিয়া ও রাজনীতির আলোচনায় হতাশার কথাই বেশি উঠে আসে, কিন্তু গভীরে তাকালে দেখা যায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ধীরে ধীরে নিজের ভেতর থেকে পরিবর্তিত হচ্ছে। বাড়ির দাম নাগালের মধ্যে আসা আর লন্ডনের বাইরের শহরগুলোয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এই দুই প্রবণতা ভবিষ্যতের জন্য বড় আশার ইঙ্গিত বহন করছে। এখন প্রয়োজন শুধু এসব ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে নজর দেয়া এবং এগুলোকে টিকিয়ে রাখার মতো নীতি গ্রহণ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য। পেনশনের ওপর অসাধ্য এবং অন্যায্য “‘ট্রিপল লক’”-এর স্থবিরতা, যা নিশ্চিত করে যে প্রতি বছর মুদ্রাস্ফীতির হার, মজুরি বৃদ্ধির হার, অথবা ২.৫ শতাংশ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিমিত কল্যাণ সংস্কারের স্থবির প্রচেষ্টা, জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সামাজিক পরিচর্যা ঠিক করার আপাত অসম্ভবতা এবং আবাসন ও নির্মাণ ব্যবস্থাকে ঘিরে পুরোনো কর এবং পরিকল্পনা ব্যবস্থা। সবই সমাধানযোগ্য চ্যালেঞ্জ। তাদের জন্য যা প্রয়োজন তা হলো আমাদের নির্বাচিত নীতিনির্ধারক এবং সরকারি কর্মচারীদের দৃঢ়? সংকল্প, যাদের এই প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে যে প্রান্তিকভাবে কাজ করলেই পার্থক্য তৈরি হবে।

দ্য ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিক সংস্করণে যুক্তরাজ্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি আগ্রহজাগানিয়া বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যকে পাউন্ডল্যান্ড নামের একটি ডিসকাউন্ট স্টোরের সঙ্গে তুলনা করা হয়, যেখানে সবকিছু মূলত ১ পাউন্ড বা তার কম দামে বিক্রি করা হয়।

অধিকাংশের মত, যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট জাগরণের পর এর অর্থনীতি সংস্কারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু নগর আবাসনের খরচ এবং আঞ্চলিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।