শেয়ার বিজ ডেস্ক : হাতকড়া ও পায়ে শেকল পরিয়ে আরও ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একটি বিশেষ ফ্লাইটে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
ফেরত আসা এসব বাংলাদেশির অনেকেই মেক্সিকোসহ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে দালালদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। জানা গেছে, তাদের অনেকে এজন্য জনপ্রতি ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন। তবে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এবং অনেকের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
তাদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রায় তিন ঘণ্টা ফ্লাইটটি রানওয়েতেই অবস্থান করে। রাত ২টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের শেকল ও হাতকড়া খোলা হয় এবং অ্যারাইভাল গেটে আনা হয়।
এ সময় বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিম, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধিরা এবং দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকসহ কাউকে তাদের কাছে যেতে দেয়া হয়নি। এমনকি ছবি তুলতেও বাধা দেয়া হয়।
ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে ব্র্যাক। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে ফিরে আসা এসব অভিবাসীর বাড়ি পৌঁছাতে অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হয়েছে।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, উন্নত জীবনের আশায় মানুষ অভিবাসী হয়। কেউ অবৈধভাবে গেলে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে ফেরত পাঠাতে পারে। কিন্তু হাতকড়া ও শেকল পরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি অভিবাসী মানুষের জন্য আজীবনের মানসিক ট্রমা হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়ায় আরও মানবিক দিকগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
গত ২ আগস্টও একইভাবে একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজে করে ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তখনও তাদের সবাইকে হাতকড়া ও শেকল পরানো হয়েছিল। চলতি বছর মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৬ সালে ২৭ বাংলাদেশিকে একইভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সেই সময়ও তাদের হাতকড়া ও শেকল পরিয়ে আনা হয়। তখন দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এক হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশই বাণিজ্যিক ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এমন এক সময়ে এই তথ্য সামনে এলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অনিয়মিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছেন। ট্রাম্প আগেই আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে ভারত ‘সঠিক কাজটাই করবে’।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমানে শতাধিক ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, তাদের মধ্যে কিছু মানুষকে শিকল পরানো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘অভিবাসন বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেবল নিশ্চিত হওয়ার পরই আমরা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিই।’ যুক্তরাষ্ট্র মোট ১৮ হাজার ভারতীয়কে অবৈধভাবে প্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে জানা গেছে।
চলতি মাসের শুরুতে ভারতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সতর্ক করে বলেছে, যারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, নির্ধারিত সময়ের বেশি অবস্থান করলে তাদেরও দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে, এমনকি আজীবনের জন্যও তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ছাত্র ভিসাসংক্রান্ত নীতিমালার হালনাগাদ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জয়সোয়াল। কারণ এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরিকল্পনা করেছেন, এমন ভারতীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।